২৩ জুলাই ২০২২


সিলেটে হঠাৎ বেড়েছে হত্যা ও আত্মহত্যা

শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটে মহামারী করোনা ভাইরাসের ধাক্কার পর দু’দফা বন্যার ক্ষত শুকায় নি এখনো। দুর্ভোগ-ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন সিলেটবাসী। এরইমধ্যে হঠাৎ করেই বেড়েছে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা। ঘটছে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও আত্মহননের ঘটনা। গত ২০ দিনে ১০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সিলেট নগরী সহ জেলার উপজেলাগুলো থেকে। এরমধ্যে ৬টি হত্যাকা- ও ৪টি আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে। গোয়াইনঘাটে জবাই করে হত্যা সহ নানা আলোচিত হত্যাকাণ্ড এর ঘটনায় উদ্বেগ দেয়া দিয়েছে সচেতন মহলে। এছাড়াও আত্মহত্যার প্রবণতা পিছু ছাড়ছে না সিলেটজুড়ে। এসব ঘটনায় উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন অভিভাবকরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩০ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ২০ দিনে সিলেট নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে ১০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে কলেজ ছাত্র, তরুণ-তরুণী, মা-ছেলে, চাকুরীজীবী ও গৃহিণী রয়েছেন।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, হিংসা, ক্রোধ, লোভ, জায়গা সংক্রান্ত বিরোধসহ নানা কারণে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও অপ্রাপ্তি, প্রতারণা, হতাশা, মানসিক অবসাদ, পারিবারিক নির্যাতন ও অতিরিক্ত আবেগ প্রবণতার কারণেই বেশির ভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে।

সর্বশেষ বুধবার ২০জুলাই নগরীর জালালাবাদ থানার শেখেরগাঁও থেকে নীলিমা ফেরদৌসী ইভা (১২) নামের এক তরুণীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে শেখেরগাঁওয়ের সাজ্জাদুর রহমানের মেয়ে। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে পরিবারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে পুলিশ। এরআগে ১৯ জুলাই বিকেলে বিয়ানীবাজার পৌরসভার নয়াগ্রামে একটি ভাড়া বাসা থেকে মোহাম্মদ আলী (১৮) নামে এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। সে মৌলভীবাজার জেলার নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ইটাউরি এলাকার বাসিন্দা। সে বিয়ানীবাজার পৌরশহরের একটি চেইন শপের কর্মচারি ছিল।

এদিকে, ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকার হাজী সিকান্দার ছাত্রাবাসের ১২ নং কক্ষ থেকে সজিব হোসেন (১৯) নামের এক কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়। সে সিলেট পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ফরিদপুর জেলার খাপরবাড়ীয়া এলাকার নুর ইসলামের পুত্র।

এছাড়াও ১৬ জুলাই বিকেলে স্বামীর সঙ্গে অভিমান করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার জৈনপুর ১নং ওয়ার্ডের সেলিম মিয়ার কলোনী তে ফারজানা (২০) নামের এক গৃহবধু আত্মহনন করে। সে বালাগঞ্জ উপজেলার দোহালিয়া গ্রামের আক্তার আলীর স্ত্রী।

অপরদিকে সিলেটজুড়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে গোয়াইনঘাটে যুবকে জবাই করে হত্যা ও ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। পূর্ব শত্রুতার জেরে ১৫ জুলাই রাতে গোয়ানইঘাটের সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লাবু গ্রামের আব্দুল খালিকের বাড়িতে প্রতিপক্ষ হামলা চালায়। এসময় আব্দুল খালিকের ছেলে আব্দুল কাদিরকে গলা কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা।

এঘটনার একদিন পর ১৭ জুলাই বিকেলে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত আব্দুল কাদিরের মা হাছিনা বেগমও (৫৫) মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একই দিন ১৭ জুলাই দুপুরে ফেঞ্চুগঞ্জ আশা অফিসের ম্যানেজার আবুল কাশেম (৪৮) কে অফিস পিয়ন ফজল নির্মমভাবে হত্যা করে।

এরআগে ১৩ জুলাই সকাল ১১টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ধারণা করছে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

এদিকে, গত ৪ জুলাই ওসমানীনগরে লেবু মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি তার ছেলের হাতে খুন হন। ঘটনার একদিন আগে আট বছরের নাতনি সায়মা আক্তার চাঁদনীকে বন্যার পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছেলে জুবেদ মিয়া। বিষয়টি জানতে পেরে পরদিন লেবু মিয়া ছেলে জুবেদকে শাসন করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জুবেদ ৪ জুলাই দুপুরে লেবু মিয়াকে বাড়িতে একা পেয়ে কুড়ালের হাতল দিয়ে এলাপাতাড়ি আঘাত করে। একপর্যায়ে তাকে বাড়ির উঠানে বন্যার পানিতে ফেলে চলে যায় সে। ওই দিন ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে লেবু মিয়া মারা যান। এছাড়াও গত ৩০ জুন ফেঞ্চুগঞ্জে ঘর ভাড়া নিয়ে সংঘর্ষে শেখ সেলিম (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। নিহত শেখ সেলিম ফেঞ্চুগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক শেখ ডালিমের বড়ভাই।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সিলেট জেলার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা থেকে উত্তোরণের জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও আত্মহত্যা রোধে অভিভাবক, শিক্ষক ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করতে হবে।

শেয়ার করুন