৫ আগস্ট ২০২২
লন্ডন অফিস : দীর্ঘ এক যুগ হতে যাওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সম্মেলন হয়নি সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের অনীহার কারণে। অথচ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদী বর্তমান কার্যকরী কমিটি এক এক করে চারটি মেয়াদ পূর্ণ করতে চলেছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের দায়িত্বশীল নেতারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সম্মেলন করতে না দিয়ে তারা দলটির পদ—পদবী আকড়ে থাকতে চান বলে সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি লন্ডন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানসহ বিএনপি-জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মী লন্ডন থেকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। তাই বিএনপি-জামায়াত ঠেকাতে গতিশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করছেন তরুণ নেতারা। এজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয়প্রধান চাইলে যে কোনো সময় সম্মেলন হতে পারে। সেজন্য প্রস্তুত রয়েছেন তারা।
দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সনের ২৯ জানুয়ারী। এতে সুলতান মাহমুদ শরীফকে সভাপতি এবং সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুককে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছর মেয়াদী একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়।
দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কমিটির তিন বছর মেয়াদ পূর্ণ হলে আবার সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন আরো একটি নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। দলের গঠনতন্ত্রে তিন বছর অন্তর অন্তর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। গঠনতন্ত্রের তিন বছর মেয়াদী কমিটির নিয়মনীতি গুলো দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ প্রতিপালন করলেও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতারা তোয়াক্কা করেন না অথবা তারা এব্যাপারে নির্বিকার। তারা খোঁড়া যুক্তি দেন, নেত্রী যখন চাইবেন, তখন যুক্তরাজ্য আওয়ীলীগের সম্মেলন হবে। অথচ বর্তমান কমিটির এই নেতৃত্ব ২০১০ সালে দু’দফায় বেলজিয়ামে সরকারী সফরে আসা দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তাগদা দিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ীলীগের সম্মেলনের বাপ্যারটি স্মরণ করিয়ে দেন এবং জোরালো তৎপরতার মাধ্যমে নেত্রীর কাছ সম্মেলনের দিনক্ষন নির্ধারণ করিয়ে নেন। কিন্তু বর্তমান মেয়াদর্ত্তীন কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব পদ—পদবী ধরে রাখতে সম্মেলনের আয়োজন করতে অনীহা রয়েছে বলে মনে করেন দলের নেতৃত্বে আসতে আগ্রহীদের অনেকে। এনিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের বর্তমান নেতৃত্বকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু আওয়ামীলীগের মত দলের গঠনতন্ত্রকে আমরা যদি সম্মান করি না, তাহলে আমরা কিসের নেতা। তাই সম্মেলনের দাবী জানাচ্ছি। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সম্মেলন না হওয়ার কারণে দলের সহযোগী সংগঠন গুলোর সম্মেলন হচ্ছে না। তারা যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সম্মেলনের অপেক্ষায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ বলেন, আমরা সবাই সম্মেলন চাই। আশা করি উদ্যোগ নেয়া হবে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ জালাল উদ্দিন বলেন, যুক্তরাজ্যে সিলেট অঞ্চলের লোকজন বেশী। তাই যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগও এ অঞ্চলের লোকদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। যদি সিলেটের বাইরে অন্যান্য জেলার লোকদের দ্বারা যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ চলত, তাহলে চার—পাঁচটা কমিটি হয়ে যেত এরই মধ্যে। এভাবে এগারো-বারো বছর কেউই অপেক্ষা করতো না। কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত নেত্রীকে বলি নাই, যে নেত্রী আমাদের সম্মেলন করেন, নেতৃত্ব চেইঞ্জ করেন,কমিটি চেইঞ্জ করেন। আমরা বলি নাই এর জন্য কারণ, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগই একমাত্র সংগঠন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এসে এখানে সম্মেলন করেন। বাংলাদেশে কোন জেলায় গিয়ে নেত্রী সম্মেলন করেন না। এই জন্য নেত্রীকে বলি না। নেত্রী জানেন, কখন দিতে হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি, দু’টি সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকীয়সহ বেশ কয়েকটি পদ খালি রয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মারা গেছেন, দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন অথবা দলীয় কর্মকান্ডে সম্পূর্ণ নিস্ক্রিয় রয়েছেন। এছাড়া অনেকে উপরেরটা খাবেন, নীচেরটাও খাবেন এই নীতিতে অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে সংগঠনের কাজে সময় না দিয়ে পদ—পদবী দখলে রেখে দেশে এমপির টিকিট ভাগিয়ে নেয়ার দৌড়ে আছেন। আবার কেউ কেউ দেশের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতেও নাম লিখিয়েছেন।