নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বছরের ১৬ অক্টোবর বিকেলে নগরীর টিলাগড় এলাকায় আভ্যন্তরীন বিরোধে খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র ওমর আলী মিয়াদ। এ ঘটনায় ১৮ অক্টোবর নিহতের পিতা বাদী হয়ে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে ১০জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।
তবে এই মামলায় রায়হানসহ বেশিরভাগ আসামীই এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। মিয়াদ হত্যা মামলার অন্য আসামীরা হলেন- তোফায়েল আহমদ, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সরোয়ার হোসেন চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের খান, জেলা ছাত্রলীগের সমাজসেবা সম্পাদক জাকারিয়া মাহমুদ, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহিম শাহ্, জেলা ছাত্রলীগের উপ দপ্তর সম্পাদক রাফিউল করিম মাসুম, রুহেল, ফকরুল আহমদ, শওকত হাসান মানিক। এছাড়াও আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ছাত্রলীগের কর্মী জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম।
১৪ সেপ্টেম্বর নিহতের মা বাদী হয়ে শাহপরান থানায় ছাত্রলীগ নেতা টিটু চৌধুরীসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ২২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায়ও টিটু চৌধুরীসহ বেশিরভাগ আসামী এখনো পলাতক। তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এভাবে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটলেও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আসামীরা থেকে যাচ্ছে অধরা। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। ফলে বন্ধ হচ্ছে না হত্যাতকান্ড। ধারাবাহিকভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে চলছে। কেবল টিলাগড় এলাকায়ই ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলে গত ৪ মাসে খুন হয়েছেন তিনজন। টিলাগড়েই খুন হন মিয়াদ ও মাসুম। এখনো এই দুটি হত্যা মামলার চার্জশীট দিতে পারেনি পুলিশ।
সর্বশেষ রোববার (৭ জানুয়ারি) টিলাগড় গ্রুপের বিরোধের বলি হয়ে প্রাণ হারালেন সিলেট সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের নেতা তানিম খান। রোববার রাত ৯ টায় নগরীর টিলাগড়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ছুরিকাঘাতে খুন হন তানিম। এ ঘটনায় সোমবার রাত পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ডায়মন্ডসহ ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত হিসেবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের বেশিরভাগকেই এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সংশ্লিস্টরা জানান, টিলাগড় এলাকার ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রন করে থাকেন দুই আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ ও রনজিত সরকার। অপরাধীরা অপরাধ করেও তাদের ছত্রছায়ায় থেকে পার পেয়ে যায়। খুনিরাও অধরা থেকে যায় এই দুই নেতার কারণে।
এ ব্যাপারে সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আর রনজিত সরকার কল রিসিভ করেননি।
জানা যায়, গত ৭ বছরে সিলেটে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হয়েছেন ৯ জন। এরমধ্যে চারটি হত্যাকান্ডের ঘটনাই ঘটেছে টিলাগড় এলাকায়।
একের পর এক সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনা সম্পর্কে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার বলেন, এসব ঘটনা আমাদের জন্যও বিব্রতকর। এসব ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। অনেকসময় দলে ঢুকে পড়া অনুপ্রবেশকারীরাও এসব ঘটিয়ে থাকে। তবে এগুলো বন্ধে দলের শীর্ষ পর্যায় ও অভিভাবক সংগঠন আ্ওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সিলেট শাহপরান থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, সবগুলেো হত্যাকান্ডের ব্যাপারেই পুলিশ সরব রয়েছে। আসামীদের ধরতে চেষ্ঠা করছে। তবে আসামীরা আত্মগোপনে থাকায় তাদের গ্রেপ্তার সম্ভব হচ্ছে না।
(আজকের সিলেট/১২ জানুয়ারি/ডি/এসটি/ঘ.)