২৬ নভেম্বর ২০২২


প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে থাকেন না ‘বীরাঙ্গনা শিলা গুহ’

শেয়ার করুন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে থাকেন না মৌলভীবাজারের বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। তিনি শ্রীমঙ্গল শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। এরকম আরও কয়েকজন থাকছেন না আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

সুবিধাভোগীরা বলছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। কাজের সন্ধানে শহরে যেতে হয়। অতিরিক্ত যাতায়াত খরচে নাজেহাল অবস্থা তাদের। তাই অনেকেই প্রাপ্ত ঘর খালি রেখে শহরে বা সুবিধাজনক স্থানে বসবাস করেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলছেন, দু-একটা ঘটনা এমন হতে পারে। বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। আশ্রয়ণের ঘরগুলোর বাকি সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন তারা।

জানা যায়, এ পর্যন্ত মৌলভীবাজারের সাত উপজেলায় ৩ হাজার ৫৬টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। পানি সংকট, যাতায়াত সমস্যার কারণে অনেকেই সেখানে থাকতে চান না।

মৌভীবাজার সদর উপজেলার মাইজপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে গেলে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তারা বলেন, এখানে ৪৩টি পরিবার বসবাস করে। তবে দুটি ঘর খালি আছে। যাদের নামে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তারা অন্যত্র থাকেন। আশ্রয়ণে থাকা বেশিরভাগ দিনমজুর কাজের সন্ধানে বাইরে থাকেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার মোহাজিরাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন হয় ২০২১ সালের ২০ জুন। সেসময় ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে সবার দৃষ্টি কেড়ে দেশব্যাপী আলোচিত হন বীরাঙ্গনা শিলা গুহ। তার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি। সেই শিলা গুহ থাকেন না প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে। তিনি শ্রীমঙ্গল শহরের মেহেরজাননিবাস কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকেন।

বীরাঙ্গনা শিলা গুহ বলেন, মোহাজিরাবাদ চা বাগানের পাশে আমার উপহারের ঘর। কিন্তু সেখানে থাকলে কোনো উপার্জন হয় না। শহর থেকে অনেক দূরে, তাই বাধ্য হয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়।

জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলের মোহাজিরাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পে শিলা গুহ, মনোয়ারা বেগম, মায়া খাতুন এই তিন বীরাঙ্গনাকে মুজিবশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে শুধু মনোয়ারা বেগম থাকেন। বাকি দুজন থাকেন না।

মোহাজিরাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগম বলেন, এখানে কষ্ট করে থাকি। আমরা তিন বীরঙ্গনা এখানে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়েছি। শুধু আমি একা থাকি, বাকিরা এখানে থাকেন না।

তার সঙ্গে থাকা মেয়ে রোকেয়া বেগম বলেন, আমরা কষ্টে আছি। অভাবের কারণে আমার ছেলের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়া শ্রীমঙ্গলের মাইজদিহিতে চা বাগানের উচুঁ টিলায় অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছে ২৯৫টি পরিবার। সেখানে গেলে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, এই উঁচ টিলায় তাদের উঠতে নামতে কষ্ট হয়। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটে।

সেখানে বসবাসকারী পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, তিনমাস ধরে পানি সংকটে ভোগান্তিতে আছি। মোটর চুরি হওয়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন বলেন, শ্রীমঙ্গলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৬৫০টি ঘর দেওয়া হয়েছে। মোহাজিরাবাদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের মালিক থাকেন না। আমরা বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাকি সমস্যাগুলো পর্যায়ক্রমে দেখা হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় বলেন, সুবিধাভোগীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। মাইজদিহি আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের যাতায়াতে সমস্যা রয়েছে।

শেয়ার করুন