৭ মার্চ ২০২৩
শাহিদ হাতিমী : আল্লাহকে স্মরণ, নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, মিলাদ ও দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সিলেটে পালিত হচ্ছে পবিত্র শবে বরাত। শবে বরাতের মহিমান্বিত রাতে পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শহর-নগর, মফস্বলসহ সিলেটের প্রত্যেকটি মসজিদে বয়োবৃদ্ধ থেকে শুরু করে শিশু-কিশোররাও নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন রয়েছেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করছেন।
১৫ শাবান । পবিত্র শবে বরাত । আজ মঙ্গলবার দিন শেষে সেই মহিমান্বিত রজনী। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় মহান রাব্বুল আলামিনের রহমত কামনায় নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে রাতটি অতিবাহিত করছেন। পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের জন্য ইবাদতের আমেজ বয়ে আনে। সিলেট নগরীর ঐতিহ্যবাহি হজরত শাহজালাল রহ. দরগাহ জামে মসজিদের চিত্রটি তেমন জানান দিচ্ছে।
শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরি সনের শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ রাত। এই রাতকে ভাগ্যরজনী বলা হয়ে থাকে। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানরা শবে বরাতে মহান আল্লাহ ও তার প্রিয় হাবিবের সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য নফল রোজা, দান-সদকা ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন।
পবিত্র কুরআনের সুরা দুখানে উল্লেখিত একটি আয়াতে বর্ণিত একটি বিশেষ রাতের ব্যাখ্যায় ইসলামি ধর্মবিশারদদের কেউ কেউ বলেছেন, বরকতময় সে রাতটি হচ্ছে মধ্য শা’বানের রাত তথা শবে বরাত। প্রাসংগিক আয়াতগুলো হচ্ছে- হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমিতো এটা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়। (সূরা দুখান, ১-৪) কুরআনের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাকার ইকরামা ‘এক বরকতময় রাত’ এর ব্যাখ্যায় বলেছেন যে, এ রাতটি হলো মধ্য শাবানের রাত। ইকরামার উপরিউক্ত ব্যাখ্যার সাথে কুরআনের ভাষ্যকারদের অধিকাংশই সহমত হতে পারেননি। ইমাম কুরতুবী তাঁর তাফসীরে বলেছেন- “কোন কোন ধর্মবিশারদ বলেছেন, ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে মধ্য শাবানের রাতকে (শবে বরাত)।
‘শবে বরাত’ শব্দযুগল ফার্সি হওয়ায় আরবিভাষী নবী মুহাম্মাদ (সা) বাণিসমষ্টিতে এর উল্লেখ পাওয়া যায় না। তবে মহানবী মুহাম্মাদ (সা) এর বাণিসমষ্টি নামে খ্যাত হাদিস শাস্ত্রে ‘শবে বরাত’ বলতে যে পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে, তা হলো ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান’ তথা ‘শা’বান মাসের মধ্য রজনী’। হাদিস শাস্ত্রে শবে বরাত সংক্রান্ত যেসব হাদিস উল্লেখিত হয়েছে, সেগুলো বিভিন্ন মানের। এসকল হাদিসের কোন কোনটি সহীহ বা বিশুদ্ধ পর্যায়ের, কোনটি হাসান বা সৌন্দর্যমণ্ডিত, কোনটি জইফ বা দুর্বল, কোনটি জইফে জিদ্দান বা অতি দুর্বল আর বাকিগুলো মাউযু বা জাল হাদিস।মুআয ইবনে জাবাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম (সা) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।’’ (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস ৫৬৬৫)।
শাবান মাস শেষে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের আনন্দ বার্তা নিয়ে শুরু হয় সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। শবে বরাতের পরদিন বাংলাদেশে নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি। এবার এই ছুটি পড়েছে ৮ মার্চ বুধবার। পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়। শবে বরাতের এই পবিত্র রজনীতে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে অশেষ রহমত ও বরকত কামনার পাশাপাশি দেশের অব্যাহত অগ্রগতি, কল্যাণ এবং মুসলিম উন্মাহর বৃহত্তর ঐক্যের প্রার্থনা জানাই। সৌভাগ্যমণ্ডিত পবিত্র শবে বরাতের পূর্ণ ফজিলত আমাদের ওপর বর্ষিত হোক।’
বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে পবিত্র শবে বরাতের মাহাত্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সিলেটসহ সারাদেশের মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ্-নাতসহ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।