২৮ এপ্রিল ২০২৩
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি : হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা দোকানঘর। স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী ঘর দুটো নির্মাণ করছেন। তাদের দাবি, তারা বন বিভাগের অনুমতি নিয়েই কাজ করছেন।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাকা দোকানঘর নির্মাণে আইনি বাধা আছে। পাকা ঘর নির্মাণ করা হলে উদ্যানের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার (পানি প্রবাহের জন্য বড় খাল) পাশেই বিশাল দুইটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। আবার একটি পাকা ঘরের মাটির নিচে চারটি কামরা করা হচ্ছে। যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরাতন মহাসড়কের পাশে জাতীয় উদ্যানের জায়গা দখল করে কাঠ-টিনের দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন দোকানিরা। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মসজিদ সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কের পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে একটি আন্ডার গ্রাউন্ড পাকা দোকানঘরসহ দুইটি দোকানঘর।
পাকা দোকানঘর দুইটি নির্মাণ করছেন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ত্রিপুরা পল্লীর আকাশ দেবর্বমা ও আন্ডার গ্রাউন্ড পাকা দোকানঘর নির্মাণ করছেন মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মাসুম বিল্লাহ।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে মাসুম বিল্লার এই আন্ডার গ্রাউন্ড পাকা দোকানঘর ছাড়াও আরও দুটি দোকানঘর তার দখলে রয়েছে। উদ্যান ঘুরে তাদের দেখা পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বন বিভাগ ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণি সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিএমসি) অনুমতি নিয়ে তারা জাতীয় উদ্যানে পাকাঘর নির্মাণ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন বিভাগের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, দেশের বনভূমি রক্ষায় সরকার ২৬ নম্বর ধারার ১ (ক) উপধারায় সংরক্ষিত বন জবর দখল ও পাকা দোকানঘর নির্মাণসহ বনের ক্ষতিসাধনকারি ব্যক্তিদের অপরাধ প্রমাণিত হলে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা জরিমানা করার নিয়ম করেছেন।
বনে প্রবেশ করতে হলেও বনবিভাগের অনুমতি নিতে হবে। এখানে সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে পাকা দোকানঘরসহ অনেকগুলো কাঠ-টিনের দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে যা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলবে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, পাকা দোকানঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা আল-আমিন বলেন, তারা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমতি নিয়ে কাজ করেছেন। পাকা ঘর নির্মাণের কাজ বন বিভাগ আপাতত বন্ধ রেখেছে।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামসুন্নাহার চৌধুরী বলেন, উদ্যানে আগত পর্যটকদের খাওয়া ও বসার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা নিয়মমতো অনুমতি দিয়েছি। নিয়ম ভেঙে স্থাপনা নির্মাণ করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, বিষটি আমি জানি না, অবৈধ হলে সংরক্ষিত বনে নির্মাণকাজ বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, মৌলভীবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি এখানে নতুন যোগদান করেছেন। পাকাঘর নির্মাণ হচ্ছে জেনে তিনি কাজ বন্ধ রেখেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আছে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম।
উদ্যানে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ বসবাস করে। এর আয়তন ২৪২৮২ হেক্টর। দেশের ১০ টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান অন্যতম।