১৪ মে ২০২৩


ইয়াহইয়া চৌধুরী ‘টক অব দ্যা টাউন’

শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেট-২ আসনে দীর্ঘদিন থেকে মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে নিয়ে প্রতিযোগিতায় থাকা সিসিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছে এই আসনের মহাজোটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। নিজের পাড়ায় আয়োজিত নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এক কাতারে নিয়ে এসেছেন সাবেক এই সাংসদ, উদ্দেশ্য একটাই এলাকার উন্নয়ন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে স্যোসাল মিডিয়ায়। আলোচনা পর্যালোচনায় এমনিতেই সরগরম চায়ের টেবিল। এরমধ্যে বর্তমান মেয়র আরিফের বিভিন্ন কুটকৌশল চলমান। হঠাৎ কেন জাপার সাবেক এমপি আনোয়ারের পক্ষে মাঠে? কারন খতিয়ে দেখেত মিডিয়া পাড়ায় চলছে বিশ্লেষণ। পাড়ায় মহল্লায় চায়ের কাপে বইছে ভোটের ঝড়।

সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে মহানগর জাপা নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল যখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন, ঠিক তখনই নৌকার পক্ষে প্রচারণায় দেখা গেছে সিলেট-২ আসনে জাপার সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়াকে। মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন জাপার সাবেক এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। ঘটনাটি এখন ‘টক অব দ্যা টউন’। কিন্তু কেন তিনি এমনটি করছেন প্রশ্নটি ঘুরে বেড়াচ্ছে সচেতন মহলে। দলের এই সিনিয়র নেতার এমন কর্মকাণ্ডে নাখোশ জাপার মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে মৌখিক নালিশ করেছেন এবং প্রমাণ হিসেবে তার বক্তব্যের ভিডিওচিত্র পাঠিয়েছেন।

জাপার মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, বিভিন্ন সময় আমার কর্মসূচিতে তাকে আমন্ত্রণ জানালেও তিনি আসেননি। অথচ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সভায় অংশ নিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়েছেন। দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি কিছুতেই এমনটি করতে পারেন না। তার শৃঙ্খলাবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে পাঠিয়েছি। তারা ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।

তবে ইয়াহিয়া চৌধুরীর ঘনিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার একাধিক কারন থাকতে পারে। তন্মধ্যে একটি কারন হচ্ছে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইয়াহিয়া চৌধুরী দুজনেই একই নির্বাচনী আসনের বাসিন্ধা। ইতোমধ্যে একজন বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আর অপরজন বারবার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দলীয় মনোনয় না পেলেও নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেন আনোয়ারুজ্জামান। সুতরাং একই এলাকার মানুষ হিসেবে একইমঞ্চে থাকাটা স্বাভাবিক।

দ্বিতীয় কারন হিসেবে জানা গেছে, তারা প্রবাসে একসাথে চলাফেরা করেন এবং তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকতে পারে। অন্যকারন হতে পারে জাপার দলীয় মনোনয়ন নিতে অনেকের মাঠে ছিলেন। জাপার মনোনায়ন পাওয়ার আগে বা পরে নজরুল ইসলাম বাবুল ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীর সাথে কোন যোগাযোগ করেননি এবং উনার পাড়ায় যখন বাবুল মতবিনময় সভা করেন তখনও উনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

জাতীয় পার্টির দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাপা মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। কারন হিসেবে রয়েছে, রাজনৈতিক দলসমূহের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়ার পর দলের হাইকমান্ড থেকে স্থানীয় নেতাদের কিছু জানানো হয়নি, এমন কি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বাবুলও সিলেটের নেতাদের সাথে কোন মতবিনিময় বা পরামর্শও করেন নি। জাপার সিনিয়র নেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী ও আব্দুস শহীদ লষ্কর বশির ছাড়া আর কোন নেতাকে বাবুলের পাশে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ১৮ নং ওয়ার্ডে বাবুলের মতবিনিময় সভায়ও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি জাপার প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরীকে। মুলত দলীয় প্রার্থীর এমন আচরনের কারনেই শুধু ইয়াহিয়া চৌধুরীই নন সিনিয়র নেতারাও তার পাশে নেই।

তবে জাপার সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী আজকের সিলেট ডটকমকে বলেন, শুক্রবার রাতে এভারগ্রীণ ক্লাবের উদ্যোগে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মতবিনিয় সভার আয়োজন করা হয়। এটি আওয়ামিলীগের কোন সভা ছিলনা, এমনকি মঞ্চে আওয়ামীলীগের কোন নেতাও ছিলেন না। পাড়ার একজন বাসিন্দা হিসেবে সেখানে গেছি, এটা কোনো দলীয় প্রোগ্রাম ছিলে না। আর নৌকার প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমার নিকটাত্মীয় এবং একই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। তিনি আমার নির্বাচনেও অনেক খেটেছেন। যে কারণে অতীত ভুলে যেতে পারি না। আমরা যেকোন প্রয়োজনে সব সময় একে অন্যের পাশে থাকি।

তিনি বলেন, বাবুল দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে কর্মীদের সাথেও দূরত্ব তৈরি করেছেন। আমার ওয়ার্ডে মতবিনিময় করেছেন, কিন্তু আমি জানি না। তিনি বলেছেন আমাকে ফোন করেছেন, ফোনের কল লিস্ট চেক করলেই তো পাওয়া যাবে উনি আমাকে ফোন করেছেন কিনা।

প্রসঙ্গত, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিকি) নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে হবে। তফসীল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে, বাছাই ২৫ মে এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। মেয়র পদে পাঁচজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

শেয়ার করুন