১৭ মে ২০২৩
ডেস্ক রিপোর্ট : যান্ত্রিক ত্রুটিতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানির সার কারখানা। গত ১০ মাসে প্রায় ১০ বার বন্ধ হয়েছে এই সার কারখানা। এতে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চলতি বছরের শুরুতে এমোনিয়া প্লান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে টানা ২ মাস ১০দিন বন্ধ থাকে কারখানাটির উৎপাদন। এরপর বিদেশী প্রকৌশলী এনে সংস্কার করা হলে শুরু হয় উৎপাদন। কিন্তু দেড় মাসের মাথায় যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয় কারখানার পাওয়ার প্ল্যান্টে। এতে ফের বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন।
শাহজালাল সার কারখানার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বছরের শুরুতে সার কারখানার এমোনিয়া গ্যাস টারবাইনের এয়ার কমপ্রেসারের কন্ট্রোল সিস্টেম সফটওয়ারে ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় পুরো প্লান্ট। প্লান্টটি চালু করতে বুয়েটসহ দেশের সব নামিদামি সফটওয়ার কোম্পানির প্রকৌশলীকে খবর দেয়া হয় কিন্তু দেশীয় কারও পক্ষে সম্ভব হয়নি আধুনিক ওই সফটওয়ার স্থাপন করা। যোগাযোগ করা হলে ওই সফটওয়ারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতালির জি ই ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানির প্রকৌশলী ফেঞ্চুগঞ্জ এসে প্রায় ১০ দিনের প্রচেষ্টায় আধুনিক সফটওয়ার স্থাপন করেন।
সূত্র জানায়, এমোনিয়া প্লান্টে বিদ্যমান সফটওয়ারটি ছিল ২০০৫ সালের। চলতি মে মাসের ৭ তারিখ শাহজালাল সার কারখানায় ফের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ওইদিন দুপুর ২টার দিকে কারখানার পাওয়ার প্লান্টের অক্সিলারি বয়লারের এফডি সেন ট্রিপ করে। এতে একটি বয়লার বন্ধ হয়ে গেলে স্টিম স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় পাওয়ার প্লান্ট। ফলে প্রায় ৩দিন বন্ধ থাকে কারখানার উৎপাদন। ৯ই মে রাত ১১টার দিকে ফের চালু হয় শাহজালালে উৎপাদন। এর আগে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নানা কারণে প্রায় ৮ বার বন্ধ হয়েছে শাহজালাল সারকারখানা।
উৎপাদন শাখা জানায়, অর্থবছরের ১০ মাসে প্রায় ৩ মাস বন্ধ ছিল শাহজালাল সারকারখানা। এতে ব্যাহত হয়েছে লক্ষাধিক টন ইউরিয়া সারের উৎপাদন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
শাহজালাল সার কারখানার হিসাব বিভাগীয় প্রধান আব্দুল বারী জানান, চলতি অর্থবছর সার কারখানার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সাড়ে ৪ লাখ টন। মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সার কারখানায় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টন ইউরিয়া। বর্তমানে শাহজালালের দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ গড়ে ১৪শ’ টন। ২০১২ সালের ২৪শে মার্চ ফেঞ্চুগঞ্জের পুরাতন সার কারখানার পাশে শাহজালাল সার কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমেরিকা, নেদারল্যান্ডস ও ইতালির প্রযুক্তিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে চীনের মেসার্স কমপ্লান্ট। অত্যাধুনিক এ সার কারখানার প্রধান প্লান্ট ইউরিয়া ও এমোনিয়ার প্রসেস লাইসেন্সর হচ্ছে এমোনিয়ায় আমেরিকার বিখ্যাত কোম্পানি কিলোগ ব্রাউন এন্ড রোটস (কেবিআর) এবং ইউরিয়ায় নেদারল্যান্ডের খ্যাতিমান কোম্পানি স্টেমিকার্বন বি, ভি। শিল্পশহর ফেঞ্চুগঞ্জে প্রথম সারকারখানা নির্মিত হয় ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। ন্যাচারাল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি (এনজিএফএফ) নামে ফেঞ্চুগঞ্জের ওই সারকারখানা স্থাপন করেছিল জাপানের কোবে স্টিল লিমিটেড।
১৯৬১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর এনজিএফএফ যাত্রা করে। ২০ বছরের ইকোনমিক লাইফ নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও পুরাতন ওই সার কারখানা চালু ছিল প্রায় অর্ধশত বছর। নবনির্মিত শাহজালাল সার কারখানার যাত্রা শুরু হয়ে ২০১৫ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর। এই শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ইকোনমিক লাইফও ২০ বছর। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে এই সার কারখানাকেও দীর্ঘদিন উৎপাদনক্ষম রাখা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত।
শাহজালাল সার কারখানা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াবুল হোসেন বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এখানে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আসার পর মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে ফের উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।