২৪ মে ২০২৩


দলীয় সিদ্ধান্ত ‘উপেক্ষা’ করে কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতারা

শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন সিসিক নির্বাচনে বিএনপি দলীয় ভাবে অংশ হিচ্ছে না। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দেয়ার পর সিসিকে মেয়র পদে বিএনপির কোন নেতা মনোনয়ন দেন নি। এমন কি বিষয়টি নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কড়া বার্তার পরও দলীয় সিদ্ধান্ত উপক্ষো করে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন দলটির প্রায় তিন ডজন নেতা।

মেয়র পদে এবং একজন বর্তমান কাউন্সিলর নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও নিজ দলীয় কাউন্সিলরদের আটকাতে পারেনি বিএনপি। দলটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে বিএনপি দলীয় বর্তমান ৭ কাউন্সিলরের ৬ জনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

মনোনয়নপত্র জমাদানকারী কাউন্সিরর প্রার্থীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীরা হলেন- ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সৈয়দ তৌফিকুল হাদী, ৬নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম. ১৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য জিল্লুর রহমান উজ্জ্বল, সংরক্ষিত ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও বিএনপি নেত্রী শাহানা বেগম শানু, ২৫ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ, সংরক্ষিত ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি সালেহা কবির শেপি, সংরক্ষিত ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর দিবা রাণী দে, ১৫নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুজিবুর রহমান মুজিব, ২৬নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সেলিম আহমদ রনি, ৩৯নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন, ১নং ওয়ার্ডে মুফতি কমর উদ্দিন, ৩নং ওয়ার্ডে মো. মিজানুর রহমান, ৪নং ওয়ার্ডে কামাল মিয়া ও শেখ মো. শাহেদ সিরাজ, ১০নং ওয়ার্ডে আফতাব, ১২নং ওয়ার্ডে আবদুল কাদির, ১৮নং ওয়ার্ডে সালমান চৌধুরী, ২৩ নং ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য মামুনুর রহমান মামুন এবং সংরক্ষিত ৪ নং ওয়ার্ডে অ্যাডভোকেট জোহরা জাসমিন ও রাহেনা খানম মুক্তা, ২৯ নং ওয়ার্ডে জেলা বিএনপির উপদেষ্ঠা মোস্তফা কামাল, ৩০ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান রাজু, ৩৩নং ওয়ার্ডে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন নাদিম, ৩৩নং ওয়ার্ডে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা গৌস উদ্দিন পাখি. ৩৭নং ওয়ার্ডে উপজেলা বিএনপি নেতা দিলওয়ার হোসেন জয়,৩৮নং ওয়ার্ডে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক উসমান হারুন পনির, ৪০নং ওয়ার্ডে মহানগর ছাত্রদলের সহ সভাপতি মো. আবদুল হাছিব, ৪২ নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক সুমন সিকদার।

এর আগে গত ২০ মে সমাবেশ করে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন আরিফুল হক। এর দুই দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান নগরের ৪ নং ওয়ার্ডের টানা চারবারের কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তবে লোদী ছাড়া বিএনপির বর্তমান কাউন্সিলরদের কেউই নির্বাচন থেকে সরে আসেননি। বর্তমান কাউন্সিলরদের ৬ জনই প্রার্থী হতে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।

দলের আপত্তি সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম শাহনাজ বলেন, বিএনপির সকল কাউন্সিলররাই এবার প্রার্থী হয়েছেন। একমাত্র কয়েছ লোদী ছাড়া কেউই নির্বাচন বর্জন করেননি। তাই আমিও মনোনয়ন জমা দিয়েছি। বাকী নেতারা যদি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নে তবে আমিও প্রত্যাহার করবো।

বর্তমান ৬ কাউন্সিলর ছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাধারণ ৪২টি ও সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে বিএনপির অন্তত তিন ডজন নেতাকর্মী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মনোনয়ন পত্র জমা দেয়া প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক যুগ্ন আহবায়ক ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, এলাকার মানুষ তো আমাকে ছাড়ছে না। আমি এখানকার দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর। আর কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। তাই কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে দলের আপত্তি থাকা ঠিক নয়।

১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদ্য সাবেক সদস্য সৈয়দ তৌফিকুল হাদী বলেন, দলের পাশাপাশি আমাকে এলাকার মানুষের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হয়। এলাকাবাসীর চাপেই আমি প্রার্থী হয়েছি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী আজকের সিলেটকে বলেন, নির্বাচনে অংশ না দিতে দলের কড়া বার্তা রয়েছে। তার পরও যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আমার দৃঢ় বিশ্বাস তারা প্রত্যাহার করে নেবেন। আর যারা প্রত্যাহার করবেন না দলের তাদের বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।

সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী আজকের সিলেটকে বলেন, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি- দেশ গণতন্ত্র পুণপ্রতিষ্ঠা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে অংশ নিয়ে যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, বিভিন্ন সময় মামলা ও হামলার স্বীকার হয়েছেন, দলের অনেক নেতাকর্মী অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে যারা এখনো প্রার্থী রয়েছেন তারা সরকারের পতানো এই প্রহসন ও ‘স্মার্ট কারচুপির’ নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিবেন। আর যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আর ২১ জুন ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।

শেয়ার করুন