২৯ মে ২০২৩
শাহ্ মাশুক নাঈম, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে : বর্ষায় পানিতে যখন চারিদিকে ভরপুর থাকে। তখন মাঠে গরু চড়ানোর কোনো জায়গা থাকেনা। তখন দেখা দেয় গো-খাদ্যে খড়ের অভাব। আর এ অভাব পূরণের বিকল্প হিসেবে শুকনো খড় বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখেন কৃষকরা।
কৃষকদের বর্ষায় আর গো-খাদ্য খড় নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। অন্যথায় বর্ষায় গো-খাদ্য নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধানের পর গো-খাদ্য সংরক্ষণ করতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন হাওরঞ্চলের কৃষকরা।
সরেজমিন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ধান শুকানোর পর এখন গো-খাদ্য খড় সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যেও হাওরের উঁচু স্থান, আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে ধান গাছের কাঁচা খড় শুকাচ্ছেন কৃষকরা। দিনভর খড়ের এপিঠ-ওপিঠ শুকিয়ে কেউ-কেউ হাওই খলায় খড়ের গাদা দিয়ে রাখছেন। একসময় এগুলো বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা জানান।
আবার অনেককেই দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় উৎসবের আমেজ নিয়ে বড়-বড় খড়ের গাদা দিয়ে রাখতে। কেউ আবার এসব খড় দিয়ে টিন সেটের ছাউনি বানিয়ে রাখছেন। খলায় মাড়াইকৃত ধান শুকানোর পাশাপাশি কৃষকরা এখন গো খাদ্য সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
স্হানীয় কৃষকরা জানান, গত ২০২২ সালের বন্যায় হাওরের সম্পূর্ণ ফসল তলিয়ে গেলে দেখা দেয় গরুর খাদ্যের সংকট। অনেকেইে তখন বাধ্য হয়ে কম মূল্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে নিজেদের পালন করা গরু বিক্রি করতে বাধ্য হন। এবার উপজেলায় হাওয়ারগুলিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান ঘরে তুলে স্বস্তিতে প্রতিটি কৃষক পরিবার।
উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল ছালাম জানান, বর্ষাকালে খড়ই গো খাদ্য হিসাবে একমাত্র ভরসা। বর্ষায় গো-খাদ্য সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই গো-খাদ্যের সংকট মোকাবেলায় খড় সংরক্ষণে ব্যস্ত আছি। বর্ষায় যাতে গো খাদ্যের জন্য কোন চিন্তা করতে হয় না।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের খড় ব্যবসায়ী আইয়ূব আলী জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে খড়ের ব্যবসা করছি। বন্যার সময় গো খাদ্য খড়ের অনেক চাহিদা থাকে। আমরা ধান কাটা মাড়াই পর পরই প্রতি বিঘা জমি ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা দরে খড় কিনে মজুদ রাখি। বর্ষায় গ্রামে-গ্রামে ঘুরে আরও খড়ের পালা কিনি। সময় হলে মণের ওজন হিসাবে বিক্রি করি। এতে প্রতি মৌসুমে খড়ের ব্যবসা থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা আয় করি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহিন মিয়া বলেন, বর্ষাকালে গো খাদ্যের সংকট দেখা দেয়। এ সংকটের সম্মুখীন হতে, বিকল্প হিসাবে কৃষকদের খড়ের পাশাপাশি পতিত জায়গায় উন্নত জাতের ঘাস চাষ করতে হবে। কাঁচা ঘাসে দ্রুত গরুর উন্নতি বৃদ্ধি পায়। এবং তার মাঝে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। অল্পদিনে গরু সুঠাম হয়। উন্নত জাতের ঘাস চাষ করে সফলতা পেলে গো-খাদ্য নির্ভরশীলতা কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মুহসিন বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎসবমূখর পরিবেশে ধান ঘরে তুলেছে কৃষকরা৷ ধান ঘরে রেখেই গো-খাদ্য খড় সংরক্ষণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বর্ষাকালে গো-খাদ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পায়, তার আগে কৃষকেরকে পতিত জায়গা, অনাবাদি জমি ও বাড়ির আঙিনায় ও সড়কের ধারে উন্নত জাতের ঘাস চাষের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি।