২ জুন ২০২৩
ডেস্ক রিপোর্ট : হাওরাঞ্চল মানেই শিশুদের দৌড়ঝাঁপ, দুরন্তপনা। শৈশবে মাঠে ঘাটে খেলাধুলা আর কৈশোরে বাপ-চাচাদের খেত খামারে কাজ করা, সুযোগ পেলে স্কুলে যাওয়া। ছোটোখাটো প্রাইমারি স্কুলে যেতে তেমন পারিবারিক তাড়াও নেই। ভালো লাগলে গেলো, ভালো না লাগলে নেই। ফলে হাওরাঞ্চলে শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে শিশুরা। আর এই পিছিয়ে পড়ার সুযোগে তারা জড়াচ্ছে অনলাইন জুয়াসহ নানান অপরাধে। এরসবচেয়ে বড়ো কারণ শিক্ষার সুযোগ কম এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতে দুর্গম পথ।
হাওরাঞ্চলে পানির সঙ্গে শিশুদের বসবাস। বছরে ছয় মাস বাড়ির আশপাশে পানি থাকে। দুই মাস রাস্তাঘাট কাদায় ভরপুর। বিদ্যালয়ে নিয়মিত যেতে পারে না শিশুরা। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল, বন্যা ও বজ্রপাত হাওরাঞ্চলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ। সে কারণে প্রতিবছর ঝরে পড়ছে হাজারো শিশু। ফলে শিক্ষার সঠিক আলো পায় না হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ শিশু।
বর্ষাকালে হাওরাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পানির জন্য প্রায় সময় বন্ধ থাকে। ছাত্রছাত্রীরা নৌকায় খুবই কম আসে। কাস হয় না নিয়মিত। বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে বিদ্যালয়। ফলে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে অনেক শিক্ষার্থীর মধ্যে সেভাবে আগ্রহ তৈরি হয় না। এ কারণে অনেক শিশুই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারে না।
হাওর গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, মৌলিক মানবাধিকার ও সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার শিক্ষা। কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষার অবস্থা একেবারেই বেহাল।
এটি কেবল প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা নয়; নেতৃত্বের দূরদর্শিতা, সক্ষমতা ও নৈতিকতাও এখানে বড় প্রশ্ন। প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার হাওরের শিশুরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশের প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন হচ্ছে। ডিজিটাল থেকে এখন স্মার্ট হওয়ার অগ্রযাত্রায় দেশ। প্রযুক্তি দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করেছে, মানুষকে স্বাচ্ছন্দ্য দিচ্ছে। তবে কখনও কখনও সেটা বিপজ্জনকও। বিশেষ করে স্মার্ট মোবাইল ফোনে বিপথগামী হচ্ছে হাওরের শিশুরা।
হাওরে শিশুদের জন্য খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই। বছরের অনেকটা সময় পানিবন্দী জীবন হওয়ায় অনলাইন গেমসে আসক্ত হওয়ার পাশাপাশি অপসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। টিকটক, লাইকির মতো প্রশ্নবিদ্ধ অনেক ওয়েবসাইট বা নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে ধাবিত হচ্ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে না হলেও বিজ্ঞাপনের লিংক নিয়ে যাচ্ছে বিপথে। এ ছাড়া সাইবার বুলিংয়ের মতো ভয়াবহ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে শিশুরা।