২৭ জুলাই ২০২৩
ডেস্ক রিপোর্ট : ইএনটি ও হেড-নেক সার্জারী বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্যোগে ‘বিশ্ব হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার দিবস’ পালিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকালে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ চত্বরে হাসপাতাল প্রশাসন, কলেজ প্রশাসন,নাক-কান-গলা বিভাগের সকল চিকিৎসক ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক মণ্ডলী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে সচেতনতামূলক র্যালির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপনের কার্যক্রম শুরু হয়।
র্যালি শেষে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: মনি লাল আইচ লিটুর সভাপতিত্বে কলেজের মেডিকেল এডুকেশন ইউনিটে “হেড-নেক ক্যান্সার ম্যানেজমেন্ট: নাক-কান-গলা বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রেক্ষিত ” বিষয়ে সায়েন্টিফিক সেমিনার এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে নাক-কান-গলা বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা: মো: আব্দুল হাফিজ শাফী তথ্য-উপাত্ত ভিত্তিক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে দেখা যায় ২০২২ সালে করা অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ ছিল নাক-কান-গলার বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। সচেতনতার অভাবে ৬৩ শতাংশ রোগী হাসপাতালে আসেন এডভান্সড স্টেজে অর্থাৎ ক্যান্সারের শেষ ধাপে।
রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা: বিজন সেন এর উপস্থাপনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা: শিশির রঞ্জন চক্তবর্তী ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতার জন্য এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
সিলেট অঞ্চলে ক্যান্সার পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ-এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, মরণঘাতি এ রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ধূমপানের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। সিলেটের নাক-কান-গলার ক্যান্সার সার্জারীর চলমান কার্যক্রমকে সমন্বিতভাবে আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য আহবান করে তিনি বলেন এজন্য কলেজ কতৃপক্ষের সব ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: মাহবুবুর রহমান ভূইয়া নাক-কান-গলা বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
ক্যান্সার জটিল রোগ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এজন্য মাল্টি ডিসিপ্লিনারী অ্যাপ্রোচ নিতে হবে। বোর্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে ভালো ফল পাওয়া যায়, তাই টিউমার বোর্ডের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: মনি লাল আইচ লিটু বলেন, হেড নেক একটি জটিল ব্যাপার। এর সাথে মানুষের নাক, কান ও গলার বিষয়টি জড়িত। জড়িত মানুষের কথা বলা, মানুষের খাবার-দাবার এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসও।
তিনি বলেন, নাক-কান-গলার ক্যান্সারের মধ্যে ৭৫ শতাংশই তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের কারণে হয়। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য যেমন- কাঁচা তামাক, জর্দা, মুখের ভিতরে পান পাতা রেখে দেওয়া এবং অতিরিক্ত সুপারি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে এবং মুখের ভিতর পরিষ্কার রাখতে। ধূমপানের সাথে এলকোহল বা মদ্যপানের অভ্যাস নাক-কান-গলার ক্যান্সারের সম্ভাবনা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাস নামক এক ধরণের ভাইরাসের কারণেও হতে পারে মুখের ভিতরে ক্যান্সার । কিছু দেশে এর ভ্যাকসিন চালু হয়েছে।
ওসমানী মেডিকেলের নাক-কান-গলা বিভাগে প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত নাক-কান-গলার ক্যান্সার সার্জারী হচ্ছে, তবে সমগ্র বিভাগের চাপ সামলানোর জন্য অপারেশনের নির্ধারিত দিন আরো বাড়ানোর প্রয়োজন উল্লেখ করেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের আওতায় এ পর্যন্ত ৪১ জন জন্ম বধির শিশুর অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে সিওমেক নাক-কান-গলা বিভাগ।
এছাড়াও আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- কলেজের শিক্ষক সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ডা: আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ মুকুল, নাক -কান-গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: নূরুল হুদা নাঈম এবং আবাসিক সার্জন ডা: এম নূরুল ইসলাম।
দেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার আক্রান্তের মধ্যে শুধুমাত্র হেড-নেক ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যাই ৩০-৩৫% এবং এর প্রাদুর্ভাব ক্রমবর্ধমান। প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা গেলে হেড-নেক ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য বলে জানিয়েছেন উপস্থিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকবৃন্দ।