৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩


ইয়াবা চোরাচালানের ট্রানজিট পয়েন্ট সিলেটের জকিগঞ্জ-কানাইঘাট

প্রতিকী ছবি

শেয়ার করুন

খলিলুর রহমান: ভারতের সাথে নদী সীমান্তে ঘেরা জকিগঞ্জ ও পাহাড়ি সীমান্তে ঘেরা কানাইঘাট। সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদক ও ইয়াবা চোরচালানীরা। সম্প্রতি এই উপজেলা দিয়ে ইয়াবা চোরাচালানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদক চোরাকারবারিরা।

মিয়ানমার থেকে ভারত হয়ে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসতে সিলেটের সীমান্তবর্তী এই দুই উপজেলােই চোরা কারবারীদের নিরাপদ রুট।

সম্প্রতি সিলেট নগরীতে ইায়াবার দুটি বড় চালান ধরা পড়ার পর আলোচনায় এসেছে কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত। ভারতের সঙ্গে কানাইঘাটের দীর্ঘ নির্জন পাড়াড়ি সীমান্ত রযেছে এবং জকিগঞ্জের দীর্ঘ নদী সীমান্ত থাকায় এই দুই উপজেলা দিয়ে ইয়াবা পাচার অতি সহজ হয়ে ওঠেছে চোরাকারবারিদের জন্য।

সিলেট নগরের সাথে এই দুই উপজেলার পাঁচটিরও অধিক সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। ফলে মাদক চোরা কারবারিরা কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ এ দুই উপজোকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিচ্ছে। সিলেট নগরে পৌঁছার পর ইয়াবার চালান হাত বদল হয়ে ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়।

সূত্রে প্রকাশ, মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের মণিপুর, নগাল্যান্ড, মিজোরাম হয়ে ইয়াবার চালান ভারতের আসাম রাজ্যে পৌছায়। সেখান থেকে মেঘালায়া রাজ্যের পূর্ব খাসিলা জৈন্তা হিলস হয়ে দূর্ঘম পাড়াড়ি পথ দিয়ে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে আসে সীমান্তবর্তী কানাইঘাটের কারাবাল্লা, ডোনা, সোনারকেওড়, লোহাজুরি, মূলাগুল, লোভাছড়া, বড়বন্দ ও কালীনগর সীমান্ত এলাকা দিয়ে। পরে ছোট ছোট আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে কানাইঘাট সদর, কানাইাঘাটের বাংলাবাজার, সড়কের বাজার হয়ে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক, সিলেট কানাইঘাট বুরহানুদ্দিন রোড, কানাইঘাট দরবস্ত রোড দিয়ে সিলেট নগরে পৌঁছায়।

অন্যদিকে ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুর-জালালপুর ভাঙ্গা হয়ে জকিগঞ্জের আটগ্রাম, মুন্সীবাজার ও আমলশীদ সীমান্ত হয়ে এবং আসামের জেলা সদর করিমগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের জকিগঞ্জ ও জকিগঞ্জের পশ্চিমে বিয়ানীবাজারের শেওলা-সুতারকান্তি পর্যন্ত পৌছানো হয় ইয়াবার চালান।

দু’দেশের সীমান্তে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী হওয়ায় উভয় দেশের নৌকায় বিনিময় এবং শুকনো মওসুমে উভয় পারের পানির কলসীতে ভরে বিনিময় করে এপার ওপার করা হয় ইয়াবার চালান। আটগ্রাম থেকে আমলমীদ পর্যন্ত শুকনো মওসুমে সুরমায় ইয়াবা দিয়ে পানির কলসী বিনিময় হয় সব চেয়ে বেশি। আর জকিগঞ্জ থেকে শেওলা পর্যন্ত নৌকা টু নৌকা বিনিময় হয় ইয়াবার চালান। এক নৌকা থেকে অপর নৌকায় তুলে দেওয়া হয় ইয়াবা ও মাদক। এরপর বিভিন্ন সড়ক দিয়ে ইায়াবার চালান চলে আসে সিলেট নগরে।

ইয়াবার চালান ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তৎপর। কিন্তু ধরা পড়ে তখন কেবল ক্যারিয়াররা। মূল ব্যবসায়ী, পুঁজি বিনিয়োগকারী ও লাইানম্যানরা সবসময় থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সম্প্রতি সিলেট নগরে পরপর দুটি বড় চালান ধরা পড়ে। ধৃতদের বাড়ি জকিগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়বলে জানা গেছে।

সিলেটে সর্বশেষ গত ৩ সেপ্টেম্বর নগরীর উপকণ্ঠ বটেশ্বর এলাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান আটক করে পুলিশ। এ সময় রায়হান উদ্দিন নামের এক যুবককে আটক করা হয়। রায়হান জকিগঞ্জ উপজেলার খারিজা গ্রামের মৃত রইব আলীর ছেলে। রায়হানের কাছেই ইয়াবার চালান পাওয়া গেছে এবং জকিগঞ্জ থেকেই সে এগুলো নিয়ে আসছিল বলে নিশ্চিত করেছেন শাহপরান থানার ওসি খায়রুল ইসলাম। তবে সূত্র জানিয়েছে, রায়হান ওই চালানের ক্যারিয়ার ছিল। ইয়াবার চালানের মূলহোতা এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এর আগে ৩০ আগস্ট সিলেট নগরীর আম্বরখানা পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে তিন মাদক বগনকারীকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা। আটককৃতরা হলো- জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মিল আলীর ছেলে মুহিবুর রহমান, বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর ছেলে আজির উদ্দিন ও সুনামগঞ্জ জেলার সদর জাহাঙ্গীরনগরের শফিকুল ইসলামের ছেলে রাসেল। মুহিব নগরীর পীরমহল্লার প্রভাতী ৪১/সি নম্বর বাসার বাসিন্দা। ওই চালানের মূলহোতা ছিলেন মুহিবুর রহমান।

আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুহিবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ তার পীরমহল্লার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৯ হাজার পিস ইয়াবা, মাদক বিক্রির ৫০ হাজার টাকা ও লেনদেনের রসিদ উদ্ধার করে। সূত্রমতে মুহিবের ইয়াবার চালান কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ হয়ে এসে থাকে।

সূত্রে প্রকাশ, নদী ও পাহাড়ঘেষা সীমান্ত হওয়ায় কানােইঘাট ও জকিগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল অনেকটা দূর্বল থাকার সুযোগে অনায়াসে চলে আসে ইয়াবা ও মাদকের বড় বড় চালান। এ ক্ষেত্রে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করার নামে মাদক কারবারীদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক বখরা আদায় করে থাকে পুলিশের কতিপয় লাইনম্যন ও মিডিয়া নামধারী ব্যক্তি। তারা চালানের রোড কিলয়ার করে দিয়ে থোকে।

ইয়াবার চালান সম্পর্কে এসএমপি’র উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকে জানান, সম্প্রতি সিলেট নগরে ইয়াবার চালানসহ যারা আটক হয়েছে তাদের বেশির ভাগের বাড়ি জকিগঞ্জে। আটককৃতদের কাছ থেকে জকিগঞ্জ ও কানাইাঘাট সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। ওই নেটওয়ার্কের সদস্যদের গ্রেফতারে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন