২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রতীকী ছবি
আবু তালহা রায়হান : পরকীয়ায় বিধ্বস্ত পুণ্যভূমি সিলেট। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইসলামপ্রিয় ও ধর্মপ্রাণখ্যাত এ অঞ্চলটি দিন দিন পরকীয়ার শহরে রূপ নিচ্ছে। মূলত বিবাহিত কোন ব্যক্তির (নারী-পুরুষ) নিজের স্বামী / স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত প্রেম, যৌনসম্পর্ক ও যৌন কর্মকাণ্ডকে পরকীয়া বলে। ইসলাম ধর্মে পরকীয়া একটি জঘন্যতম অপরাধ এবং এর শাস্তি অত্যান্ত ভয়াবহ। সম্প্রতি সিলেটজুড়ে ভাইরাসেরমত ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ এ সামাজিক ব্যাধি। প্রযুক্তিময় বিশ্বে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মোবাইল ফোন পরকীয়াকে খুবই সহজ করে দিয়েছে। সংসারে স্বামী বা স্ত্রীর অনুপস্থিতি, পর্যাপ্ত যত্নশীলতা ও ভালবাসার অভাব, দাম্পত্যকলহ কিংবা নিজেকে নিঃসঙ্গ ভেবেই তৈরি হচ্ছে পরকীয়া। এসব কারণে সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম ও পরবর্তীতে নিজেকে সিঙ্গেল দাবি করে বিয়ের প্রলোভনে অনৈতিক সম্পর্কগুলো বাড়ছে। ঐতিহ্য হারাচ্ছে শাহজালালের পুণ্যভূমি।
এদিকে এসব পরকীয়ার ঘটনায় তেমন কোনো তদন্তই হয় না। সামাজিক মধ্যস্থতায় কয়েকজন সংসারে ফিরে গেলেও সিংহভাগ হারিয়েছে তাদের সাজানো সংসার। ফলে খুন,আত্মহত্যাসহ বাড়ছে বিভিন্ন লোমহর্ষক ঘটনা।
সর্বশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) গভীররাতে জৈন্তাপুর উপজেলায় পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে স্বামীকে হত্যার চেষ্টা করেন মনিরা বেগম নামের এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় পরকীয়া প্রেমিকসহ ওই নারীকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। গত ২৬ জুন (সোমবার) সিলেটের বিয়ানীবাজারে পরকীয়া প্রেমিকের অফিসকক্ষে গিয়ে তাকে দা দিয়ে কুপিয়ে সেখানেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন এক প্রেমিকা। গত ১৭ এপ্রিল গোয়াইনঘাটের জাফলং এলাকায় নিজের পরকীয়া প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন খোশনাহার নামের এক নারী।
পরকীয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরকীয়া একটি মানসিক ব্যাধি। মানুষের মধ্যে যে বায়োলজিক্যাল ড্রাইভ রয়েছে সেটিই মূলত তাকে পরকীয়ার দিকে ধাবিত করে। শুধুমাত্র কামনা-বাসনাই এর মূল কারণ নয়।
তারা বলেন, মানুষ পরকীয়ায় জড়ায় বিভিন্ন কারণে। যদি সংসারে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে কোনো ধরণের সমস্যা থাকে এবং মানসিক শান্তি থেকে দূরে থাকেন, তবে তারা পরকীয়ার দিকে ধাবিত হতে পারেন। কেউ কেউ আবার স্বভাবগত কারণে পরকীয়ায় লিপ্ত হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, অনেকের ব্রেন সবসময় অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে চায়। কোনোভাবেই সে এই চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারে না।
সিলেটসহ বাংলাদেশে পরকীয়া বৃদ্ধিতে প্রতিবেশী দেশের মিডিয়াগুলোকেও দায়ী করছেন তারা। তাদের দাবি, এসব মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন সিরিয়ালে পরকীয়ার চর্চাটাকেই বেশি তুলে ধরা হয়। যার ফলে অডিয়েন্সরা এসব দেখে দেখে বিকৃত মানসিকতায় ঝুঁকে পরকীয়ায় লিপ্ত হোন।
পরকীয়ার প্রতিকার সম্পর্কে তারা বলেন,প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিচর্যার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। ইতোমধ্যে যারা এমন সম্পর্কের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তারা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে এই সম্পর্কের মধ্য থেকে বের করে আনা সম্ভব বলেও জানান তারা।
পরকীয়া সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাইলে মুফতি নুমান জালালাবাদি বলেন, পরকীয়া জঘন্যতম একটি কাজ। বিকৃতরুচির ঘৃণ্য বহিঃপ্রকাশ। পরকীয়াসহ সব ধরনের বিপর্যয় রোধে ইসলামের রয়েছে মৌলিক দিকনির্দেশনা। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বল, তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, এটাই তাদের জন্য বেশি পবিত্র। তারা যা কিছু করে সে সম্পর্কে আল্লাহ খুব ভালোভাবেই অবগত। আর ঈমানদার নারীদের বলে দাও, তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে, আর তাদের শোভা-সৌন্দর্য প্রকাশ না করতে, যা এমনিতেই প্রকাশিত হয় তা ব্যতীত। তাদের ঘাড় ও বুক যেন মাথার কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের মহিলা, স্বীয় মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনামুক্ত পুরুষ আর নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া অন্যের কাছে নিজেদের শোভা-সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন শোভা-সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা নুর: ৩০-৩১)
মুফতি নুমান বলেন,অশ্লীলতার সূচনা হয় কুদৃষ্টির মাধ্যমে। আর ইসলাম দৃষ্টি হেফাজতের নির্দেশনা দিয়ে সূচনাতে এ উপসর্গটি নির্মূল করে দেয়। উল্লিখিত আয়াত দু’টি যার প্রমাণ।
তিনি আরও বলেন,বিয়ের মধ্য দিয়েই ইসলাম পৃথিবীতে মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইসলামে পরকীয়া-ব্যভিচার ও অবৈধ সম্পর্কে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও যদি কেউ ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির হুশিয়ারি।