২৭ অক্টোবর ২০২৩
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : বন্ধ হয়ে গেল হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ১২৭ বছর পুরনো তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশনটির কার্যক্রম। ১৮৯৬ সালে ব্রিটিশ সরকার এই এলাকার জনসাধারণের যোগাযোগ ও আশপাশের বেশ কয়েকটি চা বাগানের পণ্য পরিবহনের জন্য স্টেশনটি চালু করে। তখন থেকে এই রেলস্টেশনটির এই এলাকার ব্যবসা বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই স্টেশনটির সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বর্বর গণহত্যা শুরু করার পর সারা দেশে যখন বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছিল, ঠিক তখনই তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু বাঙালি অফিসার ও সৈনিক সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে চলে আসেন তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশনে।
তারপর এখান থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বড়ো বাংলায় (মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সদরদফতর) অবস্থান নিয়ে শুরু করেন সংগঠিত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধা ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশনে এক জনসভায় স্টেশনটিকে বি ক্লাসে উন্নতি করার ঘোষণা দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তার এই ঘোষণা বাস্তবায়ন হয়নি।
পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক মোস্তফা শহীদ ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর এক জনসভায় আবারও এই স্টেশনটিকে বি ক্লাসে উন্নতি করার ঘোষণা দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত দুই মন্ত্রীর ঘোষণা আলোর মুখ দেখেনি।
অভিযোগ আছে, যতবারই এই স্টেশনের উন্নয়নের চেষ্টা করা হয়েছে ততবারই রেলওয়ের জমির অবৈধ দখলদার কিছু লোক ঘুষ দিয়ে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে। স্টেশনের গেটম্যান নূর ইসলাম জানান, আগে এই স্টেশনে বাল্লা, কুশিয়ারাসহ কিছু লোকাল ট্রেনের স্টপেজ ছিল। এই ট্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে, তাই এখানে আর কোনো ট্রেন দাঁড়ায় না।
স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এখান থেকে প্রতিদিন প্রচুর যাত্রী বিভিন্ন গন্তব্যে আসা-যাওয়া করতেন। আগে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক এদিকে ছিল। চা বাগানের পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তার কারণে মহাসড়কটি অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ে অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া বলেছিলেন স্টেশনটি বি ক্লাসে উন্নতি করা হবে এবং আন্তঃনগর ট্রেন থামবে এখানে। এখন কোনো ট্রেনই থামে না। স্টেশন নামে আছে কাজে নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা চয়ন চৌধুরী জানান, তেলিয়াপাড়া রেলস্টেশন থেকে সাতছড়ী জাতীয় উদ্যান মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দুরে। কাছেই মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার খ্যাত ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া চা বাগানের বড়ো বাংলা ও স্মৃতিসৌধ, সুরমা চা বাগান।
স্টেশনটি বি ক্লাসে উন্নতি করে আন্তঃনগর ট্রেন দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করলে, এসব এলাকায় প্রচুর পর্যটক আসবে। পাশাপাশি আশপাশের প্রায় চল্লিশটি গ্রাম, দুটি চা বাগান ও সাতছড়ী এলাকার স্থানীয় জনসাধারণের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে। এই এলাকায় অনেক শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে, তাদেরও পণ্য আনা-নেওয়ায় সুবিধা হবে।