১৪ নভেম্বর ২০২৩


হুমকির মুখে টাংগুয়ার হাওরের করচ গাছ

শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : টাঙ্গুয়ার হাওর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি। ১৯৯৯ সালে সরকার এই এলাকাকে ‘বিপন্ন প্রতিবেশ এলাকা’ ও ২০০০ সালে ইউনেস্কো রামসার এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এই হাওর বিরল প্রজাতির মাছ ও অতিথি পাখির স্বগরার্জ্য হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীব্যাপী অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন ২৬ প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থলও হাওরটি। অথচ ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অবাধ বিচরণ ও যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা, গাছপালা নষ্ট করা- এসব কারণে সেখানকার জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে।

ফলে টাংগুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোড, নৌকার অবাধ বিচরণে আগত পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে শতশত করচ গাছ। হাওরের কান্দায় লাগানো গাছের মধ্যে দিয়ে বর্ষায় সময় হাউসবোড ও নৌকা চলাচল, গাছে লাগানোর সময় গাছে আঘাতের পর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে এবং গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় এখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাচ্ছে শতাধিক করচ গাছ। আরও পড়ে যাবার আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে কান্দা থাকা গাছগুলো।

এখনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে হাওরের করচ গাছগুলো বলে জানিয়েছেন হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দাগণ।

হাওর, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মিজানুর রহমান রাসেল বলেন, হাওরের গাছ বিলীন হলে প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকি মুখে পড়বে দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার। হাওরের প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ আশা করেন তিনি।

হাওর ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন টাংগুয়ার হাওরপাড়ের বাসিন্দা আহমেদ কবির। তিনি হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রকৃতি ও সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকগণের আগমনে ভরপুর হয়ে যায় টাংগুয়ার হাওর। আর হাওরে আসা হয় হাউসবোড ও নৌকায়। পর্যটক পরিবহনকারী যানবাহনগুলো হাওরে এসেই কান্দায় থাকা করচ গাছে নৌকা নোঙর করে। এ সময় প্রচন্ড আঘাতে গাছে নৌকা ও হাউজবোডের রশি বাঁধে। কান্দায় থাকা করচ গাছের মধ্যে দিয়েও চলাচল করে। এছাড়াও পর্যটকগণ এসেই গাছে উঠে লাফিয়ে পানিতে পড়ে। গাছের গোড়ায় গোসল করে। এর ফলে মাটি নরম হয় আর পানি কমে গেলেই গাছগুলো দুর্বল হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, টাঙ্গুয়ার হাওরের ইজারাদার বৃক্ষপ্রেমী জয়নাল আবেদীন টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ-টাওয়ার এলাকাসহ হাওরের চারপাশের কান্দাগুলোতে সারিবদ্ধভাবে হাজার হাজার করচ গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। এই চারাগুলো পরিপূর্ণ রুপ নিয়ে হাওরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, পাখি আবাসস্থল ও প্রকৃতি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে।

টাংগুয়ার হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নিয়ে বিশাল হাওরটি অরক্ষিত ও অব্যবস্থাপনার কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে হাওরের চারপাশের কান্দা, গাছ, মাছ ও অতিথি পাখির অস্তিত্ব।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাদার ফিসারিজ খ্যাত টাংগুয়ার হাওর স্থানীয় লোকজনের কাছে নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত ও প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট, প্রথমটি সুন্দরবন। ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে হাওরটি জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানি বহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার, বাকি অংশ কৃষিজমি ও ৬৮টি গ্রামের মানুষ বসতি।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা শামিম মিয়া জানান, টাংগুয়ার হাওর থাকা শতশত করচ গাছ আগত পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। সেই গাছগুলো সামান্য বাতাস আসলেই পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনই যদি গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে কান্দা গুলোকে সংরক্ষণ করে রাখা যায় তাহলে টাঙ্গুয়ার হাওরের শতশত গাছ রক্ষা পাবে। না হলে হাওরের পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এমনিতেই হাওরে মাছ, পাখি ও গাছ নেই। দিন দিন হাওরের গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।

সুনামগঞ্জ সহকারী বনসংরক্ষক নাজমুল আলম জানান, গাছগুলো রক্ষায় জন্য ও কি অবস্থায় আছে তা দেখার জন্য রেঞ্জ অফিসারকে পাঠাব। দেখে প্রয়োজনীয় কি ব্যবস্থা নেয়া যায় সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তিনি হাওরে আগত পর্যটক ও তাদের পরিবহনকারী হাউসবোড ও নৌকাগুলোকে সচেতন হবার আহবান জানান।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, টাংগুয়ার হাওরে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। এই বিষয় খোঁজ খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

শেয়ার করুন