নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বহুল আলোচিত মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির দলীয় কাউন্সিলররা। তারা মেয়র আরিফের অতিতের সকল বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এবার বিকল্প প্রার্থী খুঁজছেন। অবশ্য দলে মধ্যে এখন আরিফ ছাড়াও আরো তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। দল যদি খুলনা ও গাজিপুরের মতো সিলেটেও আরিফকে রেখে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তবে ঐক্যব্ধভাবে প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গিকারও ব্যক্ত করা হয়েছে। আর এনিয়ে সিলেটে বিএনপির হিসেব নিকাশ পুরোটাই এখন পাল্টে যাচ্ছে।
সর্বশেষ বুধবার রাতে বিএনপির মনোনয় প্রাত্যাশী ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে বিএনপির ১৬জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩জনই উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে নির্বাচিত ৩জন প্যানেল মেয়রও ছিলেন। এনিয়ে নগরজুড়ে তোলপাড় চলছে। সচেতন মহল মনে করছেন শেষ পর্যন্ত আরিফের পরিনতি হয়তো গাজিপুর এবং খুলনার মতোও হতে পারে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে জানা যায়, বুধবার রাতে এক দিনের নোটিশে সেলিমের বাসায় বৈঠকে মিলিত হয় ১৩ কাউন্সিলর। বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আপলাপ আলোচনা হয়। আসছে নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী ছাড়াও দলীয় মনোনয়ন চাইছেন নগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ও প্যানেল মেয়র (১) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। বৈঠকের শুরুতেই তিনজন প্যানেল মেয়রই বিএনপির থাকার পরও আরিফুল হক চৌধুরী তার অনুস্থিতিতে কোন প্যানেল মেয়রকে মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে দেন নি, যা দিয়ে প্যানেল মেয়রদের নির্বাচনী ওয়ার্ডবাসীও ক্ষোব্ধ। এনিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এইবষয়টি আলোচনায় চলে আসে।
তাছাড়া আরিফুল হক চৌধুরী সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গাজিপুরের মেয়র মান্নানের মতো দলের নেতাকর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করছেন না এবং দলের জন্য কোন কাজ করছেন না। যা করছেন তা নিচের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য তাই দলের ভবিষ্যতের জন্যই বিকল্প প্রার্থী প্রয়োজন। তবে উপস্থিত কাউন্সিলররা দলে যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্য কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন।
এসময় বদরুজ্জামান সেলিম তিনি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দল এবং কাউন্সলরদের জন্য কাজ করার প্রতিজ্ঞাও করেন বদরুজ্জামান সেলিম।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র (১) রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র (২) এডভোকেট সালেহ আহমদ চৌধুরী, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলার ও প্যানেল মেয়র (৩) এডভোকেট রুখশানা বেগম শাহনাজ, ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ফরহাদ চৌধুরী শামীম, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার নজরুল ইসলাম মুনিম, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার দিনার খান হাসু, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিন, ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার আব্দুর রকিব তুহিন, ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার সিকান্দার আলী, ১৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার এবিএম জিল্লুর রহমান উজ্জল, ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার রাজিক আহমদ, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সৈয়দ তৌফিকুল হাদী ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সালেহা কবির শেপী।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম আজকের সিলেট ডটকমকে বলেন, আমি দলের জন্য কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে আমি নির্বাচনে অংশ নিব। মাত্র এক দিনের নোটিশে কাউন্সিলররা এবৈঠকে উপস্থিত হয়েছেন। আমি এতে অনুপ্রাণিত। তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করার আশ্বাস দিয়েছেন্ বৈঠকে প্যানেল মেয়রদের দায়িত্ব না দেয়া সহ বর্তমান মেয়রের অনেক বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে কাউন্সিলররা কথা বলেছেন। সর্বপরি দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার জন্য কাজ করব।
তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে বুধবার রাত থেকে একাধিক বার কল দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রথ্যেকবারই ফোন রিসিভ করেন তিনি ব্যবস্থ আছেন বলে জানান তার ব্যক্তিগত সহকারী।
(আজকের সিলেট/২০ এপ্রিল/ডি/কেআর/ঘ.)