You Are Here: Home»লিড নিউজ»এক ডাক্তার দিয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!
এক ডাক্তার দিয়ে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!
আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: হাওর উপজেলা আজমিরীগঞ্জের স্বাস্থ্যসেবা দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে লাখো মানুষের চিকিৎসা সেবা।
চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। ডাক্তার না থাকার কারণে রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। অনেক রোগীই দ্রুত চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।
জানা যায়, আজমিরীগঞ্জের এক লাখ ২০ হাজার জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে বর্তমানে একজন ডাক্তার ও পাঁচজন নার্স রয়েছে। আটজন মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার ও ১৪ জন নার্সের বিপরীতে মাত্র পাঁচজন নার্স দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। অন্যান্য বিভাগেও জনবল শূন্য রয়েছে।
৩১ শয্যার এ হাসপাতালটি দিন দিন রোগীরশূন্য হয়ে পড়ছে। এছাড়াও অপারেশন থিয়েটার বন্ধ রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। কোনোমতে চলছে আউটডোরের চিকিৎসা সেবা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কোনো জঠিল রোগী নিয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তার না থাকার কারণে যেতে হচ্ছে জেলা সদর কিংবা সিলেটের ওসমানী হাসাপাতালে। যেখানে অপারেশনের রোগী ও গুরুতর রোগীরা মাঝপথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।
এক্সরে মেশিন অকেজোসহ আরো নানা যন্ত্রপাতির সমস্যায় হাসপাতাল নিজেই জর্জড়িত হয়ে পড়ছে। এক কথায় বলা যায়- কোনোমতে টানাটানি করে চলছে হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে- এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন বরাবরে শূন্য পদ পূরণে বার বার আবেদন করলেও তার কোন সাড়া পাওয়া যায় না।
স্থানীয় বাসীন্দা আক্তারুজ্জামান তরফদার জামান জানান, হাওর অঞ্চলের এক লাখ ২০ হাজার লোকের চিকিৎসা মাত্র একজন ডাক্তার দিয়ে হচ্ছে বিষয়টি বিস্ময়কর। তিনি বলেন এখানে অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অনেক প্রসূতি রোগী চিকিৎসার অভাবে হবিগঞ্জ-সিলেটে যাওয়ার পথেই মৃত্যুবরণ করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী মুহাম্মদ আজম খান জানান, হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের সংকটের কারনে আমরা দিনের পর দিন চিকিৎসা সেব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এছাড়াও এখানে যা চিকিৎসা দেয়া হয় তা নামে মাত্র।
হাফিজুর রহমান নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, হাসপাতালটি নামে মাত্র আছে, চিকিৎসা সেবা নাই বললেই চলে। এখানে সামান্য আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। আসলেই বলা হয় চিকিৎসক নেই।
হাসপাতালের সিনিয়র নার্স জোস্না সূত্রধর জানান, এখানে সিনিয়র ১৪ জন নার্সের বিপরীত আছে মাত্র পাঁচজন। এর মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা কেউ ছুটিতে গেলে দায়িত্বরতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। একজন নার্স দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা সম্ভব না। তারপরও আমরা সাধ্যমতে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি।’
হাসপাতালের একমাত্র মেডিকেল অফিসার ডা. মহিউদ্দিন আনসারী জানান, ‘আমি দিন রাতে একাই চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। একজন চিকিৎসকের বিশ্রামের প্রয়োজন আছে। ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে করতে অনেকটা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি আমি নিজেই। তিনি বলেন- অন্তত পক্ষে আরো ২ জন চিকিৎসক দেয়া হলে কিছুটা হলেও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে।
আজরিমীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নগেন্দ্র কুমার দাশ জানান, হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স সংকটের বিষয়য়ে একাধিকবার সিভিল সার্জন অফিসসহ পরিচালকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। জবাবে শুধু আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।