সাত্তার আজাদ, অতিথি প্রতিবেদক
সিলেট : উচ্চ ফলনের আশায় সিলেট থেকে স্থানীয় জাতের ধান হারিয়ে গেছে। শত শত বছরের লালিত-পালিত এসব ধানের নাম পর্যন্ত মনে করতে পারেন না অনেক কৃষক। হারানো দিনের এসব ধান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার অধিক ক্ষমতাবান ছিল।
মাত্র তিন দশক আগেও সিলেট অঞ্চলের মানুষ স্থানীয় জাতের ধানচাষে অভ্যস্ত ছিলেন। সময়ের ব্যবধানে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার ফলাফল উফশী জাতের অধিক ফলনশীল ধান উদ্ভাবিত হয়। ফলে কম সময়ে বেশি লাভ পেতে কৃষকরা ঝুঁকে পড়েন উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে। ফলে আশির দশকের পর থেকে স্থানীয় জাতের ধান উৎপাদন কমে যায়।
কৃষিবিদ কবীর আহমেদ জানান, স্থানীয় জাতের ধান প্রাকৃতিক নিয়মের জন্ম নেয়া। তাই সে ধানগাছের খাদ্য শোষণ ক্ষমতা কম ছিল। তাই পুরনো দিনের ধান চাষে জমির উর্বরা শক্তি অক্ষুন্ন থাকত।
স্থানীয় প্রবীণ কৃষকরা জানান- আশির দশকের আগে উৎপাদিত আউস, আমন, ইরি, বোরো ধানের মধ্যে ছিল বালাম, ভুতুবালাম, মকাইবালাম, মালাসাইল, পশুসাইল, কাকসাইল, রঞ্জিতসাইল, কুটারিসাইল, মণিসাইল, রাজাসাইল, বড়সাইল, নাজিরসাইল, ভেড়িসাইল, কার্তিকসাইল, মোটরসাইল, ময়নাসাইল, আয়নাসাইল, আখনিসাইল, গর্জিসাইল, ভরিসাইল, কন্যাসাইল, লাঠিসাইল, লতিসাইল, নাগরাসাইল, ইন্দ্রসাইল, বিনাসাইল, গোয়ারসাইল, কাটারীভোগ, গোলাপভোগ, বাদশাভোগ, প্রসাদভোগ, ঠাকুরভোগ, বাগদার, বাদাল, ল-বাদাল, তেলিবাদাল, কার্তিকা, জড়িয়া, দুমাইয়া, তুলসিমালা, পাইজম, ময়নামতি, বাসমতি, চানমণি, নয়নমণি, শবরিমালতি, বুড়িপাগলি, দীঘা, টেপিবোরো, খইয়াবোরো, নুনকুচি, দক্ষিণমুখা, সোনামুখি, বামনক্ষীর, লালক্ষীর, আশফল, সদামোটা, চ্যাঙ্গাই, পাটনাই, বিরোন বা বিন্নি, গন্ধিবিরোন, কাকিবিরোন, পুটিবিরোন, মধুবিরোন, পাকবিরোন, দুধবিরোন, টলাবিরোন, লাখাইবিরোন, মৌবিরোন, সোনাবিরোন, সাদাবিরোন, লাটবিরোন, আড়াই, গোয়ারাইল, গোয়াল চড়া, মধুমালতী, সরু, সুগন্ধি, কালিজিরা, চিনিগুড়া, পর্বতজিরা, বাঁশফুল, চিনিকানাই, চিনিদানা, দুধকলম, ভুনষী, কুমরাগইর, খামা, সাইট্যা, বাড়িআলা, দোলার, হাসমিতা, কটকতারা, মরিচবটি, স্বর্ণলতা, শাক্করখানা, গইর, বীরকাজল, পাটনাই, পরিচক, লাকী, বাশিরাজ, দামান্দর মুখ, বাইংগন বিচি, রাতা, গোয়ার চড়া, খাসরা, ডুবা, ঘরই, জটাই, গৌরিকাজল, ধানাকান্ধি, মহিষকান্ধি, লক্ষিনতা, নোড়াইসাটে, ভেড়েনটা, মানি দীঘা, খেয়ামটর, হাসিকলম, ফলকচু, ঝিঙেশাল, দেবমণি, দুধমণি, কালা বয়রা, আশ্বিনাদীঘা, আশ্বিনা, মানভোগ, দুধকলম, কাজলাদীঘি, বালামকাপো, সোনারগা, টেপা, গাজিরভোগ, হরিণমুদ্রা, যাদুরফলা, চেংড়ি, মন্ডেশ্বর, ভাগ্যেশ্বরী, সমুদ্রফেনা, চাপাইল, কালাফুরা, কালামেকরি, হাশিম, আইজং, হাটি, গন্ধকস্তুরি, গলদেসহ শতাধিক জাতের ধান।
কোনো কৃষক কেবল শখ করে কিছু বিন্নি বা বিরুন ধান ও বাঁশফুল, বাসমতি, পাইজম, চিনিগুড়া, কালিজিরা, সরু, সুগন্ধি, নাজিরসাইল, কাটারীভোগ, পুটিবিরুন চিনিদানাসহ প্রায় ১৫-২০ জাতের ধান উৎপাদন করছেন। কিন্তু তা সীমিত আকারে।
সিলেট কৃষি বিভাগের উপপরিচাল মো. ইলিয়াস বলেন, আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া স্থানীয় জাতের অনেক ধান ছিল। কৃষকরা সেই সব ধানবীজ সংরক্ষিত রাখত। সেই ধান বিলুপ্ত।