১৯ জুন ২০২০


গ্রামে নেই ‘স্বাস্থ্যবিধি’

শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছেই। তবুও সচেতন নন মফস্বলের মানুষ। গ্রামের হাট-বাজারে ফিরেছে পুরনো চিত্র। ভীড় সেই আগের মতোই। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি ভীড় করছেন সাধারণ মানুষ। কাজে কিংবা অকাজেও হাট-বাজারে ঘুরাফেরা করছেন তারা। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না; মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও। করোনার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অনেকটাই উদাসিন তারা। এ কারণে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টা। সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা কানাইঘাটের একটি বাজারে দেখা গেলে মানুষের ভীড়। বেশিরভাগ মানুষই আড্ডায় মত্ত। বিশেষ করে চায়ের দোকানে ভীড় রয়েছে বেশি। এদের মধ্যে আবার মধ্য বয়সীর সংখ্যাই বেশি। তরুণও পিছিয়ে নেই আড্ডায়। সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। নেই স্বাস্থ্যবিধির অনুসরণও। শতকরা ৯৫ জনের মুখে দেখা মেলেনি মাস্কের।

ফার্মাসিস্ট ফাহিম আহমদ বলছিলেন, যখনই সীমিত আকারে চলাচল আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসে তখন থেকেই হাট-বাজারে মানুষের চলাচলও বাড়তে থাকে। শহরে মানুষ একটু সচেতন হলেও গ্রামের মানুষ একেবারে অসচেতন। তারা স্বাস্থ্যবিধির কোন তোয়াক্কাই করছেন না। এতে সংক্রমণ ঝুঁকি অনেক বাড়ছে বলে মন্তব্য করলেন তিনি।

স্থানীয় সাংবাদিক আলা উদ্দিন বলছিলেন, ‘যতদিন যাচ্ছে সিলেটে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শহর ছাড়িয়ে উপজেলাগুলোতেও আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। কানাইঘাট উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ সদস্যও আছেন। এরপরেও মানুষ অবাধে হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সিএনজি-লেগুনা-টমটমে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনও করা হচ্ছে। এতে করে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছেই।’

গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ বলছিলেন, ‘প্রথম দিকে মানুষ সচেতন ছিল। আইনের কড়াকড়ির কারণে ঘরেই থেকেছিল। কিন্তু যতদিন যাচ্ছে তত তাদের মধ্যে অসচেতনতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে যখন করোনা সামাজিক ভাবে ছড়াচ্ছে, তখনই মানুষ হাট-বাজারে দলে দলে মানুষের ভীড় বেড়েছে। কেউ কোন ধরণের স্বাস্থ্যবিধিও মানছেন না। অনেকে আবার এ নিয়ে হাসিঠাট্টাও করেন বলেও মন্তব্য করলেন তিনি।

সিলেটের সবকটি উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের চিত্রই এমন- বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। অবশ্য, জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বাজার, হরিপুর বাজার, দরবস্ত বাজার বিকেল ৫ টার পর বন্ধ রাখছেন ব্যবসায়ী। আর এসব বাজারে সন্ধ্যা ৬টার পর বিনা প্রয়োজনে কেউ ঘুরাফেরা করলে তাকে জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি শ্যামল বণিক।

সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার দশদিন পর গত ৫ এপ্রিল সিলেট জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর শম্ভুক গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অবশ্য ৫৬ দিনের মাথায় এই জেলায় আক্রান্ত হন ৫০০ জন। এরপরের মাত্র ১২ দিনেই নতুন করে আরও ৭০০ জন রোগী শনাক্ত হন। আর শুক্রবার আক্রান্তের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়েছে। বাড়ছে মৃত্যুও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত ঈদের আগে শপিংমল খোলে দেওয়ার দিন থেকেই সিলেটের হাট-বাজারে বাড়তে থাকে জনসাধারণের ভিড়। ঝুঁকি নিয়েই অনেকে ছুটতে থাকেন বাজারে। আবার ঈদের ছুটি পেয়ে অন্য জেলা থেকে অনেকেই সিলেটে প্রবেশ করেন। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যাও। জেলা সদর ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায়ও পাল্লা দিয়ে বাড়ে করোনা আক্রান্ত রোগী।

আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বিস্তারের কারণে সিলেট জেলাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবুও মফস্বল এলাকায় মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা খুবই কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি না- তা নিশ্চিতে জেলা জুড়ে অভিযান শুরু করে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা এড়িয়ে চলা সম্ভব। কিন্তু সিলেটে মানুষ তা মানছে না। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক ছাড়া বাহিরে চলাফেরা করেন। সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না। এ কারণে সিলেটে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।’

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৪১ জন। আর মারা গেছেন ৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ২২৫ জন।

শেয়ার করুন