১৬ জুলাই ২০২০


শ্রীমঙ্গলে বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে পরিবেশ

শেয়ার করুন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় চলছে কোটি টাকার অবৈধ বালুর ব্যবসা। যে যেভাবে পারছেন এলাকাভিত্তিক বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।

ফলে প্রাকৃতিক জলাধার, পাহাড়ি ছড়া, সংরক্ষিত এলাকা, চা-বাগান, ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, প্রাকৃতিক প্রতিবেশ ব্যবস্থার ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। প্রাকৃতিক ছড়া, ছোট নদী ও ফসলি জমিতে শ্যালোমেশিন বসিয়ে খনন করে বালু উত্তোলন করছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হলেও কয়েকদিনের ব্যবধানে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এভাবে গেলো ৪ বছরে এসব অবৈধ বালু উত্তোলন থেকে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার সাতগাঁও, ভূনবীর, শাসন ও মির্জাপুর এলাকা ঘুরে অর্ধশত স্পটে অবৈধ বালুর ক্ষেত্র পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, পাহাড়ি ছড়া, ছোট নদী ও কৃষি জমি খুঁড়ে সেখানে মেশিন বসিয়ে ইচ্ছামতো বালু মাটি উত্তোলন চলছে। কোনো কোনোটা কূপের মতো খনন করে মূল্যবান সিলিকা বালু মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি গভীর গর্তে পরিণত হয়ে গেছে।

উত্তোলন করা এসব বালু পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যবহার করায় গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পড়ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক বাড়ি-ঘরও। দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অন্তত ছয়টি স্থানে বালুর ডিপো করে এক্সেভেটর জাতীয় ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বালু বেচাকেনা করছেন প্রভাবশালীরা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, আব্দুল জলিল, কবির মোল্লা, উজ্জ্বল মিয়া, দীপঙ্কর মাস্টারসহ প্রায় ২০-২২জন প্রভাবশালী এসব মূল্যবান সিলিকা বালু তুলে বিক্রি করছেন।

বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে আব্দুল জলিল জানান, ‘আমি বালু তোলার সঙ্গে জড়িত না, তবে আমি বালু কিনে বেচা কেনা করি।’ কার কাছে থেকে বালু কিনেন জিজ্ঞেস করলে তিনি নাম প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা বলেন, আমরা পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতি বিবেচনায় ২০১৬ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে একটি রিট পিটিশন (২৯৪৮/১৬) দায়ের করি। এই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সালে ২৭-২৮ মে হাইকোর্ট বর্ণিত ছড়াগুলো থেকে সব ধরনের লিজ প্রক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি জারি করেন।

তিনি বলেন, একইসঙ্গে রায়ে হাইকোর্ট দুই দফা নির্দেশনা দেয় যে পরিবেশের প্রভাব নিরূপণ করে লিজ বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো থেকে সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরকে গেজেটভুক্ত ৫২টি সিলিকা বালু কোয়ারির পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

পরিবেশ অধিদফতরের মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা বলেন, হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো কর্তৃক এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট এসেসমেন্ট (ইআইএ) দাখিল পূর্বক পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার রায় থাকলেও তারা কোনো এসেসমেন্ট দাখিল করেননি। এই নিয়ে দুই দফা পত্র দিয়েছি কিন্তু, জবাব না পাওয়ায় আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না।

তবে ঢাকার খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করার কথা পরিবেশ অধিদপ্তরের। এটা তারা এখনও সম্পন্ন করতে পারেনি। যে কারণে প্রক্রিয়াটি সেখানেই পড়ে আছে। ফলে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার দীর্ঘ দেড় বছর পরও জেলার ৫২টি বালু ছড়ার লিজ বন্দোবস্ত না হওয়ায় সরকারের দুই দফতরের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সরকারের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ দফতরের সিদ্ধান্তহীনতা ও সময়ক্ষেপণের ফলে সরকার বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজার জেলা সমস্বয়কারী আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, পরিবেশ নষ্ট করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের বিপর্যয়ের বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি যারা অপরাধ করছে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সিলিকা বালু আমাদের মূল্যবান খনিজ সম্পদ; এটা উত্তোলন করা নিষেধ। অবৈধ বালু উত্তোলনসহ পরিবেশের ক্ষতিসাধন বন্ধে শিগগিরই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন