২৫ জুলাই ২০২০


হাওরে ত্রাণের জন্য হাহাকার

শেয়ার করুন

তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : এক মাসের ব্যবধানে পর পর তিন বার বন্যায় পুরো হাওর এলাকায় এখন দুর্যোগ নেমে এসেছে। দিনমজুর, জেলে ও শ্রমজীবী নারী পুরুষ সবাই বেকার হয়ে আছেন। কাজের জন্য কোথাও যেতে পারছেন না। ফলে হাতে টাকা নেই, ঘরে খাবার নেই এমন এক কঠিন অবস্থায় পড়ে দিশাহারা হাওরাঞ্চলে মানুষ। যারা যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন তারাই কেবল ত্রাণ সামগ্রী পাচ্ছে। প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন ত্রাণ পাচ্ছে না। বন্যায় মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন অসহায় ও শ্রমজীবী পরিবারের মানুষ।

হাওরের চারদিকে থৈ থৈ করছে বানের পানি। বসত বাড়ি হাওরের ঢেউ থেকে রক্ষায় করতে হচ্ছে যুদ্ধ। এ কারণে হাওর এলাকার শিশু, নারী ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে। তৃতীয় দফায় টানা বর্ষণ ও ঢলের পানিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন দু লক্ষাধিক মানুষ।

উপজেলার হাওর এলাকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, দুর্গম হাওর এলাকায় দুর্গত লোকজন ত্রাণ সামগ্রী এমনকি শুকনো খাবারও পাচ্ছেন না। কারণ দুর্গম এলাকায় কেউ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসে না।

হাওরের ঘোলা জল বাড়ি ও আঙিনা পানিতে তলিয়ে আছে। বানবাসী লোকজন ঘরের ভেতরে চৌকিতে বসে গৃহবন্দি অবস্থায় কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হওয়ায়, কেউ কেউ আবার নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পরিবার পরিজন ও গোবাদী পশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী ওপানি,শুকনো খাবার ও ত্রাণ পাচ্ছে না।

তৃতীয় দফায় বন্যায় উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা, পাঠাবুকা, মারালা, নোয়ানগর, রাজধরপুর, পৈন্ডপ, নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, ইকরামপুর, লামাগাঁও, দুমাল, ভবানীপুর। দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পুরান খালাস, সাদেরখলা, চতুর্ভজ, কাউকান্দি, জামলাবাজ, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চিলানি তাহিরপুর, জয়পুর, গোলাবাড়ি, বাগলী, দুদের আউটা, ইন্দ্রপুর, মন্দিয়াতা, উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনীলাইন, রাজাই, শান্তিপুর, চানপুর, বালিজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, পাতারি, তিওরজালাল, লোহাচুরা, বড়খলা, মাহতাবপুর, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড়, চিকসা, গোবিন্দশ্রী, গাজীপুর, টাকাটুকিয়া, বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া, ঘাগটিয়া, পাঠানপাড়া, গড়কাটিসহ ৬৫টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে দূর্ভোগে আছে।

তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার ২৭০টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার উপজেলার বিভিন্ন আশয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রথম দফায় ২শত প্যাকেট শুকনো খাবার, সাড়ে ৩১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৭০ হাজার টাকা। ২য় দফায় ৭ মেট্রিকটন চাল, বর্তমানে আরো ১০১ মেট্রিকটন চাল এসেছে।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা সাবজল আহমদ জানান, হাওর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবারের সংকট। দুর্গম হাওর এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী এখনও পৌঁছেনি। এদিকে, গো খাদ্যের খড় পানিতে ভিজে পচেঁ যাওয়ায় গরুর খাবার নিয়েও মহা বিপদে আছে বানবাসী মানুষজন।

মাটিয়ান হাওর পাড়ের বাসিন্দা হাদিউজ্জামান বলেন, পরপর তিন বারের বন্যায় গ্রামের লোকজন কর্মহীন অবস্থায় ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন। দুর্গত মানুষেরা ত্রাণ পাওয়ার প্রহর গুনছেন। হাওর পাড়ের মানুষজন খুবই কষ্টে আছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ জানান, বন্যার শুরু থেকেই জরুরি ভিত্তিতে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রত্যান্ত এলাকায় পর্যায়ক্রমে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসনসহ আমি নিজেই সার্বক্ষিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর রাখছি ও ত্রান বিতরণ করছি।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ইতোমধ্যে জেলার এক লক্ষ ২০ হাজারের মতো মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। বন্যায় জেলার সকল উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থদের সহয়তা দেওয়া হয়েছে পর্যায়ক্রমে আরও ত্রাণ আসবে, সবাইকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ মাঠে কাজ করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেন।

শেয়ার করুন