১২ সেপ্টেম্বর ২০২০
ফেঞ্চুগঞ্জ প্রতিনিধি : রাতেরবেলা তেল জ্বালিয়ে এসেছি ১২শ’ টাকা।ভাড়ায় কি হয়? রোগীর অভিভাবকের কাছে- এমন প্রশ্ন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স চালক সৈয়দ আবুল হোসেনের। নিরুপায় অভিভাবক চালককে ১৫শ’ টাকা দিয়ে বললেন আর কি দিতে হবে? না চলবে- বলে বিদায় নিলেন সরকারি এ্যাম্বুলেন্সের ওই চালক।
ঘটনাটি বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গেইটে। ওই চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মেরামতের নাম করে কখনো সিলেটের ওয়ার্কশপে আবার কখনো নিজের বাড়িতে এ্যাম্বুলেন্স রেখে লম্বা ছুটি কাটানোর। নিজ খেয়াল খুশিমত ফেঞ্চুগঞ্জে সরকারি হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চলছে প্রাইভেট ভাড়ায়। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগীর সুবিধার্থে ভর্তুকি দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স চালালেও লাভবান হচ্ছেন চালকরা।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিজামপুর গ্রামের আব্দুল আহাদ চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার পর আমার আত্মীয়ের মাধ্যমে নাম্বার সংগ্রহ করে সরকারি হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক সৈয়দ আবুল হোসেনকে কল দেই, পরে আমার মাকে নিয়ে সিলেটের রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাই। এ সময় চালক সৈয়দ আবুল হোসেনকে ১২’শ টাকা দিলে তিনি জানালেন এতো রাতে তেল জ্বালিয়ে এসেছি এই টাকায় কি হয়। সরকারি হাসপাতালের চালকের এমন কথায় পরে আব্দুল আহাদ চৌধুরী ১৫’শ টাকা দিয়ে চালককে আরো দিতে চাইলে আর লাগবেনা বলে বিদায় নিলেন চালক।
৫০ শহ্যা বিশিষ্ট ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নুতন ও পুরাতন ২টি সরকারি এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে এই হাসপাতালে। পুরাতন এ্যাম্বুলেন্সটি করোনা রোগী পরিবহনের জন্য রয়েছে সিলেটের খাদিমনগর আইসোলেশন সেন্টারে। নুতন এ্যাম্বুলেন্সটি চলছে ফেঞ্চুগঞ্জ হাসপাতালে।
জানা যায়, বেতন ভাতাদিসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকা পেয়েও সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যেন অন্ত নেই। নিজের প্রাইভেট গাড়ির মত নিজ খেয়াল খুশি মত ব্যবহার করছেন সরকারি এই এ্যাম্বুলেন্সটি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা হারে ভাড়া নির্ধারণ করা রয়েছে তবে বিধান থাকলেও চালকের কাছে ভাড়ার কোন মুল্য তালিকা নেই, তাছাড়া হাসপাতালের কোথাও বড় করে সাঁটানো নেই সাইনবোর্ড। তবে কৌশলে দায় এড়াতে গাছের আড়ালে বাউন্ডারি দেয়ালের সামনে ছোট একটি সাইনবোর্ডে বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি কিলোমিটার প্রতি এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া লেখা রয়েছে যা কারো চোঁখে কোন অবস্থাতেই পড়ার নয়!
নিয়ম অনুযায়ী ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ানওয়ে ৩০ কিলোমিটার ধরে এ হিসেবে আপ-ডাউন ধরা হয় ৬০ কিলোমিটার। ১০ টাকা হারে ৬০ কিলোমিটারে সরকারি সার্ভিসবুকে জমা হচ্ছে ৬শ’ টাকা। ৬০ কিলোমিটারে জ্বালানিতে খরচ হয় ১০ লিটার যার বর্তমান মুল্য ৮৯০ টাকা। রোগীর সুবিধার্তে এখানে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছেন ২৯০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে- দুর্বলতার সুযোগে নিম্নে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রোগীর অভিভাবকদের কাছ আদায় করছেন চালকরা।
হাসপাতাল এলাকার স্থানীয় কয়েকজন নাম প্রকাশ না শর্তে শ্যামল সিলেটকে জানান, চালক সৈয়দ আবুল হোসেন এ্যাম্বুলেন্স মেরামতের নাম করে কখনো সিলেটে ওয়ার্কশপে রেখে আবার কখনো নিজের বাড়িতে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটি কাটান তিনি। নিজ চোঁখে রোগীদের যানবাহন না পাওয়ার আর্তনাদ শুনতে পান তারা। তবে হাসপাতালের বড়কর্তাকে ম্যানেজ না করে একজন চালকের এতো দুঃসাহস হওয়ার কথা নয় বলে জানান স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে চালক সৈয়দ আবুল হোসেন বাড়তি টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করলেও ওয়ার্কশপে বা নিজের বাড়িতে এ্যাম্বুলেন্স নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
উপজেলাজুড়ে জনশ্রুতি আছে সাংবাদিকসহ কারো কল ধরেননা এমন দাম্ভিকতা নিয়ে হাসপাতালের বড়কর্তার চেয়ারে আছেন ডাক্তার মো. কামরুজ্জামান। একাধিক কলের পরে অবশেষে কল রিসিভ করেন ডাক্তার কামরুজ্জামান।
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সংক্ষেপে উত্তর দিলেন ‘আমি চালককে জিজ্ঞেস করে বিষয়টি দেখছি’, তবে ভাড়ার সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন তিনি। পরে কয়েকবার চেষ্ঠা করেও আলাপ করার সুযোগ হয়নি ডাক্তার কামরুজ্জামানের সাথে।