২৫ অক্টোবর ২০২০
হুমকিতে আগর আতর শিল্প। মৌলভীবাজারে দেশের একমাত্র সুগন্ধী আগর-আতর শিল্প ধংস হওয়ার পথে। বিশেষ করে, চলতি করোনা পরিস্থিতিতে ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে এই পণ্য। আগর গাছ এক ধরণের সুগন্ধী জাতীয় কাঠ। এই গাছের নির্যাস থেকেই মূলত আতর উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই সঙ্গে গাছের ভেতরের জমাট বাধা নির্যাসের অংশটুকুই হচ্ছে আগর কাঠ। এটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে আতর তৈরি করা হয়। দীর্ঘ প্রায় দু’শ বছর ধরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়ন জুড়ে আগর আতর উৎপাদিত হয়ে আসছে। এর পাশাপাশি বড়লেখাসহ অন্যান্য উপজেলার প্রায় সবক’টি গ্রামেই আগর আতর উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে বর্তমানে এই শিল্প ধংসের দ্বারপ্রান্তে।
জানা গেছে, আগর আতরের মূল ক্রেতা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ব্যবসায়ীরা রপ্তানীর মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেন। কিন্তু বর্তমানে এই পণ্য রপ্তানী করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় বিপাকে পড়েছেন উৎপাদনকারীরা। তাদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ৭০ কোটি টাকার বেশি বলে জানা যায়। এই অঞ্চলে বেকার হয়ে পড়েছে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক। শুধু করোনাকালই নয়, স্বাভাবিক অবস্থায়ও আগর আতর শিল্পের অবস্থা ভালো নেই।
আধুনিক জ্ঞান ও শিল্পঋণের অভাব, বাজারজাতকরণে সহায়তা না পাওয়া। ই-মার্কেটিং ই-বিজনেস সম্পর্কে ধারণা না থাকা, উচ্চ আমদানী শুল্ক আরোপ ও আমলাতান্ত্রিক নানা জটিলতার কারণে এই শিল্পের আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন পদ্ধতির আধুনিক কৌশল সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবসহ বাজারজাতকরণে সরকারের সহযোগিতা না থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য নিয়ে দর কষাকষি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দেশের রপ্তানী খাতে অবদান রাখার সুযোগ থাকলেও, পারছে না এই শিল্প।
স্মরণ করা যেতে পারে, ২০১৩ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক জনসভায় আগর-আতরকে ক্ষুদ্র শিল্প হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এই শিল্পের অগ্রগতিতে তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিশেষ করে, চলমান করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা দুরূহ হয়ে ওঠেছে উদ্যোক্তাদের। অথচ বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, শতভাগ স্থানীয় কাঁচামালে তৈরি আগর-আতর বাংলাদেশের একটি প্রিমিয়াম পণ্য হতে পারে। তাদের মতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা পেলে এটি হতে পারে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো নির্ভরযোগ্য রপ্তানীমুখী শিল্প। যার মাধ্যমে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।