২৮ নভেম্বর ২০২০
দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : মো. সফি উল্লাহ। ৩০ তম বিসিএসের এ কর্মকর্তা বর্তমানে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। কিন্তু বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। একের পর এর লঙ্কাকান্ড ঘটিয়েই যাচ্ছেন তিনি। বাউল শাহ আবদুল করিম, বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের জন্মস্থান আর হাওর-বাঁওড়ের এ উপজেলায় মো. সফি উল্লাহ ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন।
তবে এ উপজেলায় যোগ দিয়েই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন এ কর্মকর্তা। সবশেষ শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় দিরাইয়ে রাফসান একাডেমি ফুটবল টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচ চলাকালীন সময় প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের বেধকর পেটান ইউএনও শফি উল্লাহ। এসময় ভিডিও ধারণ করতে গেলে এক দর্শককেও পেটান তিনি।
এর আগে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের নাম নিজের ছেলে ‘রাফসান’র নাম অনুসারে নামকরণ করেন। শুধু তাই নয়, এলাকার নবীন-প্রবীণ খোলোয়ারকে পাশ কাটিয়ে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনও করান নিজের ছেলেকে দিয়েও। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে দিরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসন দল বনাম উপজেলা বিদ্যুৎ প্রকৌশলী দলের প্রথম রাউন্ডের একটি ম্যাচ চলছিল। খেলা শুরু হওয়ার আগেই নিয়মের বাইরে গিয়ে উপজেলা প্রশাসন দলে বহিরাগত খেলোয়াড় নিতে চাইলে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা আপত্তি তুলেন। এনিয়ে দুই দলের আপত্তি-অনাপত্তির মাঝেই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল খেলা শুরু করেন।
তবে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে একটি ফাউল ধরাকে কেন্দ্র করে দুদলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের দিকে মারমুখী হয়ে ওঠেন দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফি উল্লাহ। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় কমলেশ দাসকে ধাক্কা দিয়ে মাঠে ফেলে দেন তিনি।
এসময় দুদলের মধ্যে চলমান খেলাটি ফেসবুক লাইভে পরিচালনা করছিলেন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারী নুরুজ্জামান মুকুল। এসময় খেলোয়াড়কে মারধরের ঘটনাটিও লাইভে প্রচার হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ইউএনও লাইভের বিষয়টি দেখতে পেয়ে নুরুজ্জামানকে গলায় ধরে মারতে মারতে তার মোবাইলটি কেড়ে নিতে চেষ্টা করেন।
তবে লাইভে থাকা মোবাইলটা কেঁড়ে নিতে না পারায় পুরো ঘটনাটি ফেসবুকের লাইভে চলে যায়। এসময় উত্তেজিত জনতা মাঠে প্রবেশ করেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ম্যাচ রেফারি খেলা বন্ধ করে দেন। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফি উল্লাহকে বিভিন্ন অফিসের কর্মচারীরা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে মাঠ থেকে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফি উল্লার ব্যবহৃত মোবাইলের 01730331113 নাম্বারে বারবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করেননি।
আর দিরাই উপজেলার (বিদ্যুৎ) আবাসিক প্রকৌশলী হায়দার আলী মজুমদার বলেন, খেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা ঘটেছে। পরে আমরা বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলছি।
মারধরের শিকার খেলোয়াড় কমলেশ দাস বলেন, বহিরাগত খেলোয়াড় নিয়ে প্রতিপক্ষ দলেরা খেলতে চাইলে আমরা বাঁধা দেই। পরে খেলা শুরুর প্রথম থেকেই তারা মারমুখী হয়ে ওঠেন। খেলার এক পর্যায়ে ইউএনও স্যার আমাদেরকে অন্যায়ভাবে মারধর করতে থাকেন।
প্রসঙ্গত, ৯ টি দলের অংশগ্রহণে দিরাই উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে ২০ শে নভেম্বর দিরাই সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাফসান একাডেমীর প্রেসিডেন্ট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শিশুপুত্র শাহার উল্লাহ রাফসান।
ভৈরবের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা (ফরেস্ট রেঞ্জার) এএইচএম আসাদ উল্লাহ ও গৃহিনী সেলিনা বেগমের সন্তান সফিউল্লাহ এর আগে গত ৭ অক্টোবর একটি সংবাদের প্রয়োজনীয় তথ্য নেয়া শেষে কল কেটে দেয়ার সময় ‘স্যার’ না ডেকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের উপর বেজায় খেপেছিলেন। এনিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনা হয়েছিল।