২৪ ডিসেম্বর ২০২০


কারাগার থেকে ফিরে পাচ্ছেন সরকারি ঘর

শেয়ার করুন

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় অজ্ঞতাবশত বন্যপ্রাণী হত্যার অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক এক মাস সাজা ভোগ করেছেন হতদরিদ্র দুই সাঁওতাল যুবক। তাদের থাকার জন্য সরকারি পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।

ইতিমধ্যে তাদের বরাদ্দ দেয়া সরকারি ঘরের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ইউএনও, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। এ সময় সদর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন ও ইউপি মেম্বার ফখরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিটি পাকা ঘর নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

উপজেলার সদর ইউপির বিওসি কেছরিগুল এলাকার সাঁওতাল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হতদরিদ্র এই দুই যুবকের নাম সুবল ভোমিজ সিংহ (২৫) ও জগ সাওতাল (২৫)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গৃহহীন এই দুই যুবকসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা ভাসমান জীবনযাপন করছিলেন। তারা দুইজনসহ ৯ সাঁওতাল যুবক গত ১৪ নভেম্বর আনন্দ-উন্মাদনায় মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকা থেকে একটি শজারু শিকার করেন। স্থানীয় বনপ্রহরী তাদেরকে আটক করেন।

রাতে ঘটনাস্থলে ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বন্যপ্রাণী ও সংরক্ষণ আইনে সুবল ভোমিজ সিংহ ও জগ সাঁওতালকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও অপর সাতজনকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ৭০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন। দণ্ডিত দুই সাঁওতাল যুবকের সাজার মেয়াদ গত ১৪ ডিসেম্বর শেষ হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এসব সাঁওতাল ছেলেরা কালিপূজা উপলক্ষে একটি শজারু শিকার করেছিলেন। বন্যপ্রাণী শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ তা তারা জানতেন না। আটকরা অত্যন্ত নিরীহ, হতদরিদ্র ও ভদ্র প্রকৃতির। ইচ্ছে করলে তারা পালিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু তা না করে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একজন বনপ্রহরীর হেফাজতে থেকেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতও আইনের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাশীলতার প্রশংসা করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এক মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই সাঁওতাল যুবকের পরিবার অত্যন্ত দরিদ্র, অন্যের বাড়িতে কোনোমতে থাকে। এ বিষয়টি জেনে ইউএনও স্যার তাদের দুজনকে দুটি সরকারি ঘর বরাদ্দ দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণেই তারা শজারুটি শিকার করেছিলেন। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ৯ সাঁওতাল যুবকের মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত দুজন অত্যন্ত দরিদ্র। বাবা-মাসহ তারা অন্যের বাড়িতে থাকেন। গৃহহীন হওয়ায় তাদেরকে দুটি পাকা ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

শেয়ার করুন