২৭ জানুয়ারি ২০২১
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লায় পাঁচটি পল্লী রয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে এক নামে ‘চোরের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। গ্রামগুলো হচ্ছে শাল্লা উপজেলার খামারগাঁও, নারকিলা, উজানগাঁও, বল্লভপুর ও দিরাই উপজেলার জাহানপুর।
সরকারের খাসজমি দখল করেই বহুকাল আগে ওই পাঁচ গ্রামে বসতি গড়েছিলেন এক সময়ের ‘চোরেরা’। সম্প্রতি তারা সমাজের মূলধারায় যুক্ত হয়েছেন। সরকার তাদের পুনর্বাসনে কাজ করে কয়েক বছর ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া ৩০টি ঘর পেয়েছেন এ গ্রামের গৃহহীনরা। কিন্তু ওই সব ঘর পেতে তাদের দিতে হচ্ছে ১৫-২০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাল্লার চোরবস্তি নারকিলার (একাংশ) গৃহহীনদের ঘর পেতে ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। ঘরের মালামাল আনতে গিয়ে পরিবহন খরচ প্রত্যেকের ১০-১২ হাজার টাকা লেগেছে। কাঠ মিস্ত্রিকে ১ হাজার ৫০০, ২০ কেজি রড ১ হাজার ৬০০, দলিলের জন্য প্রথম ১ হাজার ৩০০ টাকা এবং শনিবার দলিল আনার সময় আরও ১ হাজার ১৭০ টাকা দিতে হয়েছে। ফলে ওইসব টাকার ব্যবস্থা করতে অনেক গৃহহীন পরিবার মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়েছেন।
শাল্লা গ্রামের বাসিন্দা কবির মিয়া বলেন, ‘আমরা এখন চুরি ছারিদিসি ভাই, আমরা জানি শেখ হাসিনা কইছইন ঘর পাইতে কেউ যেন এক টাকাও খরচ না করে, কিন্তু আমরার খরচ করা লাগছে।’
গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘ইউএনও স্যার আর গ্রামের এলাইছ মেম্বারের কাছে আমরা ১৫ জন গেছলাম। আমরা কইছলাম আমরা গরিব মানুষ চুরি করে আগে সংসার চালাতাম, বর্তমানে আমরা চুরি ছারিদিসি। প্রধানমন্ত্রী দয়া কইরা ঘর দিছইন আপনারাও একটু দয়া করেন। তারা ধমক দিয়া কইছইন টেকা না দিতে পারলে ঘর অন্যখানো দিলাইবা। পরে সুদে ১০০০ টাকায় ধান দেবার শর্তে মহাজনের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা এনেছি।’
গ্রামের বাসিন্দা মো. রহিম মিয়া বলেন, ‘দলিল আনতে যে ১ হাজার ১৭০ টাকা দেবার জন্য শাল্লায় বলা হয়েছে। এই টাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে গ্রামের মঈনুদ্দিন, গণি মিয়া, আফাল উদ্দিন, কবির মিয়া এখনো দলিল আনতে যাননি।’
গ্রামের জজ মিয়া বলেন, ‘আমি হতদরিদ্র মানুষ, সরকার থেকে আমাকে ঘর দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ঘরের মালামাল এখনো নদীর পাড়ে আহসানপুরে পড়ে আছে। মালামাল আনতে যে পরিবহন খরচ লাগে সেটি ব্যবস্থা করতে পারিনি।’
গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘরের মালামাল আনা ও দেয়াসহ ১৬ হাজারের মতো টাকা লাগছে আমার। স্থানীয় ইউপি সদস্য এলাইছ মিয়া বলেছেন, টাকা খরচ করতে না পারলে ঘর অন্যদের দিয়ে দেবেন।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য এলাইছ মিয়া বলেন, ‘আশ্রয়হীনদের খরচের টাকা দেয়ার বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না, যা বলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলবেন।’
এ গ্রামের গৃহনির্মাণকাজ দেখভালকারী অফিসার উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মামুনুর রহমান বলেন, সরকারি ঘরের জন্য কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হচ্ছে না। মালামাল বাড়ির কাছে নদীর পাড়ে পৌঁছে দিয়ে বলা হয়েছে তারা যেন একটু কষ্ট করে নিজেরা নেন। কাঠ মিস্ত্রির ৫ হাজার টাকা আমরা দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয়ে থাকলে আমি দুদিনের মধ্যে ফেরত দেব। দলিলের জন্য কে বা কারা টাকা নিয়েছে তা জানি না।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মুক্তাদির আহমদ বলেন, শাল্লার প্রত্যন্ত এলাকায় ঘরের মালামাল পৌঁছাতে খরচ বেশি হচ্ছে। এজন্য বলা হয়েছে কষ্ট করে পারলে তারা নিজেরাই মালামাল নেয়ার জন্য। তবে অন্য খরচের বিষয়ে তার জানা নেই।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মুজিবর্ষের বিশেষ উপহারে কেউ অনিয়ম করতে পারবেন না। কোথাও কেউ গৃহনির্মাণের জন্য পরিবহন খরচের টাকা নিতে পারবেন না। নিলে অপরাধ হবে। তথ্য গোপন করে সামর্থ্যবান কেউ ঘর পেলে তার ঘর ফেরত নেয়া হবে।