৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ডেস্ক রিপোর্ট : সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁওয়ের বিয়ালীবাজারে তেলবাহী ট্রেনের ১০টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লাইনচ্যুত হওয়া বগিগুলোর মধ্যে ৫টি ডিজেলবাহী বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। বগিগুলোতে সিলেটের যমুনা অয়েল কোম্পানি ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির ২ লাখ লিটার ডিজেল ছিল।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত স্থানীয়রা জলাশয়, পুকুর ও কৃষি জমি থেকে বালতিসহ বিভিন্ন ধরনের পাত্র ভরে ডিজেল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। পুরুষ ও শিশুদের পাশাপাশি গৃহবধূরাও তেল সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলের আশপাশের অনেক পুকুর-জলাশয়ে এ থেকে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডসহ বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও দমকল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি থাকায় কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে দুর্ঘটনায় রেলপথের প্রায় ৮০০ মিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে। এমনকি এসব দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন হয়নি।
জানা যায়, তেলবাহী ট্রেনের ১০টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় বগিগুলো পড়ে গেলে তেল রেল লাইনের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তেল সংগ্রহে ভিড় করছে মানুষ। কেউ বালতি করে, কেউ গ্লাস নিয়ে তেল সংগ্রহ করেন। দুর্ঘটনার পরপরই তেল সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়েন স্থানীয়রা। অনেককে দেখা গেছে, ট্রেনের মধ্যে থেকেও তেল নিতে। এসময় কিছু লোককে তেল কিনতে দেখা যায়। তারা লোকজনের কাছ থেকে ২০-৩০ টাকা লিটার দরে তেল সংগ্রহ করে ড্রামে ভর্তি করে মজুত করছে।
সিলেটের যমুনা ডিপোর ব্যবস্থাপক (বিক্রয় বিভাগ) আব্দুল বাকি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তেলবাহী বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় সিলেটের পদ্মা ও যমুনার প্রায় ২ লাখ লিটার তেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ডিজেল ভর্তি ২টি বগি ছিল যমুনার ও ৩টি বগি ছিল পদ্মার। ট্রেনে করে তেলগুলো ডিপোতে পৌঁছার পর পরিমাপ করে টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কত টাকার ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা আমাদের নয়। ডিপোতে তেল পৌঁছার পর যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটত তাহলে সেই ক্ষতি আমাদের হতো।
সূত্র জানায়, লাইনচ্যুত হওয়া তেলের ১০টি বগির মধ্যে ৫টি ছিল সিলেটের যমুনা অয়েল কোম্পানি ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির। এরমধ্যে ২টি যমুনা কোম্পানির ও ৩টি পদ্মা কোম্পানির। তেলবাহী প্রতিটি বগিতে প্রায় ৪০ হাজার লিটার ডিজেল ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। ৫টি বগি থেকে প্রায় ২ লাখ লিটার ডিজেল পড়ে যায়। তেলগুলো চট্টগাম থেকে সিলেটে আসার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এরআগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রবিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী একটি তেলবাহী ট্রেন শাহজিবাজার স্টেশনে প্রবেশের সময় ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এসময় ট্রেনের বগিতে আগুন ধরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অপরদিকে, ২০২০ সালের ৭ নভেম্বর শনিবার শ্রীমঙ্গলে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হলে তেল হরিলুট হয়। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় সিলেটগামী একটি মালবাহী ট্রেনের তেলবাহী ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এসময় স্থানীয় লোকজন পড়ে যাওয়া বগিগুলো থেকে তেল নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ঘটনার পরপর পুলিশ বারবার চেষ্টা করেও জনগণকে রুখতে পারেনি। এসময় মেঘনা পেট্রোলিয়াম করপোরেশন লিমিটেডের প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার লিটার তেল পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।