২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১


সিলেট থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়ক এখন মৃত্যুপূরী

শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : বর্তমান সময়ে রীতিমত ‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক। সিলেট থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত অংশেই প্রতিবছর ঘটছে অগণন দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছেন শত শত মানুষ। আর পঙ্গুত্বের গ্লানি নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকার রশিদপুর, নাজির বাজার, জেলার বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর এসব স্থানে গত একবছরে শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর প্রাণ হারিয়েছেন অর্ধশতাধিক। দুর্ঘটনার সঠিক কোনো হিসেব দিতে না পারলেও প্রতিদিন অন্তত ২টি করে দুর্ঘটনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ সিলেট জোন। হাসপাতালে লাশের সারি।
দীর্ঘদিন থেকে এমন অবস্থা চললেও টনক নাড়িয়ে দেয় এক সাথে কয়েকটি প্রাণহানি।

সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুর এলাকায় দ্রæতগামী দু’টি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৮ জন। আহত অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন আরও অনেকে।

শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনার পর আহত ও নিহতদের উদ্ধার করে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল এলাকা। মর্গে থাকা নিহতদের স্বজনরা এসে জড়ো হন হাসপাতালের বারান্দায়। কেউ হাসপাতালের বারান্দায় জ্ঞান হারাচ্ছেন আর কেউ বিলাপ করছেন। মহাসড়কে প্রাণ হারানো এমন অগণন মানুষের স্বজনদের বার বার কান্নার সাক্ষী হতে হয় ওসমানী হাসপাতালকে।

একইভাবে গেল বছরের ৩১ জুলাই লাশের সারি দেখেছিল মহাসড়কের ওসমানীনগরের চাদপুর এলাকা। ঠিক একই সময় সকাল ৭টায় বাস-প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে কারের চালক ও একই পরিবারের নারী-শিশুসহ ৪ জন মিলে মোট ৫ জনের প্রাণহানি হয়েছিল এ সড়কে। এরপর ফেরে লাশের সারি তৈরি হলো আজ।

শুক্রবার এ দুর্ঘটনার পর ফের আলোচনায় এসেছে সড়কটি। নড়েচড়ে বসেছেন প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। কিভাবে এসব দুর্ঘটনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এমন বাস্তবতায় যানবাহনের বেপরোয়া গতি, অপ্রশস্ত রাস্তা আর ট্রাফিক আইন অমান্য করাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রæত ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেনে রূপান্তর এবং হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের। আর ভাঙাচোরা ও ছোট রাস্তার দোষ দিলেও চালকদের অসচেতনতার কথা কিছুটা হলেও স্বীকার করছেন শ্রমিক নেতারা।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট বিভাগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শামসুজ্জামান মানিক বলেন, ‘সাইফুর রহমানের (সাবেক অর্থমন্ত্রী) সময় সড়কটি যে পরিমাণ বড় করা হয়েছিল, এর পর থেকে একইভাবে আছে। দিনে দিনে গাড়ির পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়লেও সড়ক আর বড় হয়নি। তাছাড়া সড়কটির অধিকাংশ জায়গায় ভাঙাচোরা আছে। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। যদিও বড় বড় প্রতিটি পরিবহন তাদের চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তবুও অসচেতনতা বা অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।’

আর হাইওয়ে পুলিশ বলছে, নিয়মিত অবৈধ যানবাহন ও আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। একই সাথে বেপরোয়া গতির গাড়ির বিরুদ্ধে তাদের অভিযান থাকলেও চালকদের অসেচতনতা, ধৈর্যের অভাবসহ নানা কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

হাইওয়ে পুলিশ সিলেট জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ মাসুদ করিম বলেন, ‘আমরা সড়কে নিয়মিত অভিযান চালাই। সিলেট জোন প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৬ মাসে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তাছাড়া স্পিডগান ব্যবহার করে বেপরোয়া যানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু চালকরা কেউ কাউকে সমীহা করতে চায় না। এক গাড়ি অপর গাড়িকে সুযোগ দিতে চায় না। এছাড়া রাতে চালকরা বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আর অসচেতনতাতো আছেই। তারা সুযোগ পেলেই ইচ্ছামতো গাড়ি চালান। এজন্য দুর্ঘটনাগুলো হয়।’

সিলেট জোন প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৬ মাসে প্রতিদিন অন্তত ২টি করে দুর্ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সকলের মধ্যে যেমন সচেতনতা দরকার, তেমনি সড়কটি বড় হওয়া প্রয়োজন। চারলেন হয়ে গেলে দুর্ঘটনা কিছুটা কমে আসবে।’

শেয়ার করুন