১৫ মার্চ ২০২১
অতিথি প্রতিবেদক : ১৯৮৫ সালের দিকে প্রবাসের সুখ স্বাচ্ছ্যন্দের জীবন ফেলে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের মানুষের কল্যাণে ব্রত হন আলহাজ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। মানবসেবার নিয়তে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত এ-গ্রাম থেকে ও-গ্রাম ঘুরে ঘুরে তিনি সাধারণ মানুষের আনন্দ-বেদনা ও দুঃখ-দুর্দশার সাথী হন। এজন্য আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি।
সিলেট-৩ আসন থেকে আলহাজ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস ৬ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে তিনবার এমপি নির্বাচিত হন তিনি।
দলের নেতা-কর্মীরা জানান, আলহাজ্ব মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস এমপি গত মাসের শেষের দিকে শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি টের পান। এ কারণে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন। সহকর্মী রাজনৈতিক শুভাকাঙ্খীদের সাথে আলাপচারিতায় তার আসনে বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজে বের করার তাগিদ দেন তিনি। যদিও রাজনৈতিক সহকর্মীরা, তাঁর কথার প্রতি গুরুত্ব দেননি। তখন তাঁর কথায় রাজনৈতিক সহকর্মীরা গুরুত্ব দেননি। তারা সহাস্যে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তাঁকে আরো সামনে এগুতে উৎসাহ যোগান। রোববার সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক সভায় অনেক বক্তা বিষয়টির অবতারণা করেন।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস এমপি ছিলেন খুবই খোদাভীরু। নিয়মিত পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও আদায় করতেন তিনি। যেকোন সভা সমাবেশে তিনি রাজনীতির পাশাপাশি কোরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তৃতা করতেন। সাধারণ মানুষকে আল্লাহ ও তার রাসুলের পথ অনুসরণের তাগিদ দিতেন এমপি কয়েস। নির্বাচনী এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে ফেঞ্চুগঞ্জের নূরপুরের বাড়ির সামনে পিতার নামে আধুনিক কারুকার্যখচিত ‘দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী জামে মসজিদ’ নির্মাণ করেন। এর পাশেই নিজের জন্য কবরস্থান নির্ধারণ করেন। বিভিন্ন সময়ে সংরিক্ষত কবরটি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দেখাতেন এবং এখানে তার লাশ দাফনের জন্য ওসিয়ত করতেন।
রোববার জেলা আওয়ামী লীগের শোক সভায় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবির উদ্দিন আহমদ অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘কিছুদিন পূর্বে আমাকে ‘কয়েস ভাই’ সিলেট-৩ আসনে নতুন নেতৃত্ব তৈরির তাগিদ দিয়েছিলেন। এ সময় তাঁর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয় বলেও আমাকে জানান। তখন আমি তাঁর কথায় গুরুত্ব দেইনি। যখন মৃত্যু সংবাদ পেলাম, তখন থেকেই তাঁর ‘নতুন নেতৃত্ব’র কথাগুলো বার বার মনে পড়ছে। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে এমপি কয়েস এর জান্নাত নসীবের প্রার্থনা করেন।’
গত বৃহস্পতিবার ৬৬ বছর বয়সে মাহমুদ উস সামাদ কয়েস এমপি করোনা আক্রান্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করেন।
গত শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫ টায় কাসিম আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস এর জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। পরে তাঁর লাশ নিজের ওসিহতকৃত মসজিদের পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়।