১ এপ্রিল ২০২১
এমজেএইচ জামিল : সরকার নির্দেশিত ১৮ দফার মধ্যে গণপরিবহনের ভাড়া ৬০ ভাগ বর্ধিতের সিদ্ধান্ত বুধবার থেকেই কার্যকর হয়েছে। তবে ভাড়া কার্যকর হলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছেনা। এছাড়া বাস ও রেলে সরকারী নির্দেশনা কিছুটা পালন হলেও অন্য পরিবহনগুলোকে এই সিদ্ধান্ত মানতে দেখা যায়নি। সকল ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। ভাড়া বৃদ্ধির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। যাত্রীরা বলছেন ভাড়া সাধ্যের বাইরে বাড়লেও সেবা বাড়েনি একটুও।
লেগুনা, সিএনজি-অটোরিক্সার ভাড়া বাড়লেও মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি। অনেক বাসে অর্ধেকেরও বেশী যাত্রী দেখা গেছে। এছাড়া গণপরিবহনে অতিরিক্ত বাড়া মানতে রাজী হচ্ছেন না যাত্রীরা। ফলে বাস হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে এনিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে দেখা গেছে। বাস এবং রেলের দুই আসনে এক যাত্রী বসলেও বাস ও রেল কাউন্টারে শারীরিক দুরত্বের বালাই নেই। অনেকের মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই।
প্রতিদিন হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। এই নির্দেশনায় গণপরিবহন চলাচল ও যাত্রী ধারণে সীমিত করাকে গুরুত্ব দিয়ে ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। বুধবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। বাস ও রেল কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত মানলেও লেগুনা ও সিএনজি অটোরিক্সা চালকেরা উক্ত সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করছে। কিছু কিছু চালক অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করলেও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে যাত্রী ধারণ করছে। এ নিয়ে চালকের সাথে যাত্রীদের বাক বিতন্ডা করতে দেখা গেছে।
নগরীর বন্দরবাজার, আম্বরখানা, পাঠানটুলা, সুবিদবাজার, কুমারগাও বাসস্ট্যান্ড ও কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে পরিদর্শনকালে এবং প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী ও চালকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে কোনভাবেই মানতে চাইছেন না যাত্রী সাধারণ।
তারা বলেন, সবকিছু খোলা রেখে শুধুমাত্র গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি করে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এতে করোনার থাবা থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করা সম্ভব না। শুধু যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। অনেকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে পরিবহনে চলতে গিয়ে পড়ছেন বেকায়দায়। স্বামী-স্ত্রী ও এক সন্তান মিলে ৪ আসন নিলেও একই পরিবারের হওয়ায় তার দুই আসনেই বসে যাতায়াত করেন। তবুও তাদেরকে নিতে হয়েছে ৪ আসন। এ নিয়ে বাস কর্তৃপক্ষের সাথে বাক-বিন্ডায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে অনেককে।
নগরীর আখালিয়া কুমারগাও বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, সিলেট থেকে সুনামগঞ্জগামী গেইটলক বাসে ১০০ টাকার পরিবর্তে নেয়া হচ্ছে ১৬০ টাকা। সিলেট থেকে দিরাইগামী গেইটলক বাসে নেয়া হচ্ছে ১২০ টাকার পরিবর্তে ১৮০ টাকা। বাক-বিতন্ডা করে হলেও শেষ পর্যন্ত বর্ধিত ভাড়ায় চলাচল করতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
এদিকে কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সিলেট টু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বাসগুলোতেও ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। তবে সেখানেও ভাড়া নিয়ে বাক-বিতন্ডায় জড়াতে দেখা গেছে বাস কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীদেরকে।
নগরীর বন্দরবাজার থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত লেগুনা ও সিএনজি অটোরিক্সার ভাড়া ২০ টাকার পরিবর্তে ৩০ টাকা দাবী করা হচ্ছে। কেউই উক্ত ভাড়ায় যেতে চাইছেনা বিধায় চালককে ২৫ টাকা ভাড়া নিয়ে পুর্বের সমান যাত্রী ধারণ করছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে। বন্দরবাজার থেকে আম্বরখানার ভাড়া ১০ টাকার পরিবর্তে ১৫ টাকা দাবী করলে যাত্রী তা প্রদানে অস্বীকার করছে। ফলে পুর্বের সমান যাত্রী সাধারণ বহন করছে তারা। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জনসমাগম যেন থামতেই চাইছেনা। শারীরিক দুরত্ব দুরে থাক ৩০ ভাগেরও বেশী লোককে মাস্ক ছাড়াই নগরীতে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে বন্দরবাজার থেকে ছেড়ে যাওয়া নগরবাসেও মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি। তাদেরকেও পূর্বের ন্যায় যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে।
আখালিয়া কুমারগাও বাসস্ট্যান্ডের বাস চালক উজ্জল দে বলেন, ৬০ ভাগ বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের প্রথম দিনে যাত্রীদের বুঝাতে আমাদেরকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে আমরা নিয়মের বাইরে যাত্রী ধারণ করবোনা। সরকারের আইন ছাড়াও এব্যাপারে আমাদের বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুয়েকদিন গেলে সবার জানাজানি হলে ভাড়া সংক্রান্ত ঝামেলা আর থাকবেনা।
সিলেট থেকে সুনামগঞ্জগামী বাসের যাত্রী সুহেল মিয়া বলেন, আমি আমার স্ত্রী আর সাথে দুই বছরের সন্তান। আমরা পরিবারের সদস্যরা সারাদিন তো একসাথেই থাকি। বাসে উঠে কিছু সময় আলাদা থাকা আমাদের কোন উপকারে আসবেনা। শুধুমাত্র অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে দম্পতিদের জন্য এক আসনে বসে যাওয়ার একটা সুযোগ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া উচিত বলেও জানান তিনি।
সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ময়নুল ইসলাম বলেন, সিলেটের প্রতি বাসস্ট্যান্ডে স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা কঠিন পদক্ষেপ নিয়েছি। গেইটলক বাসের যাত্রীরা মেনে চললেও লকেল বাসের যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে নারাজ। আর অতিরিক্ত স্টোপেজে বাস থামার কারণে লকেল বাসগুলোকে এই নিয়ম কার্যকর করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। করোনা মহামারী থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার স্বার্থে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নতুন ভাড়া কার্যকরের ১ম দিনে কিছুটা সমস্যা হলেও দুয়েকদিনের মধ্যে ভাড়া সংক্রান্ত সমস্যা থাকবেনা বলেও জানান তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ সিলেট এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনার প্রকোপ বাড়লেও মানুষের মধ্যে এখনো সচেতনতাবোধ তৈরী হয়নি। শুধুমাত্র ভাড়া ৬০ ভাগ বৃদ্ধি করলেই করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা। অফিস আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য সব খোলা রাখলে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে ঘর থেকে বের হবেই। এক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি করলে জনদুর্ভোগ বাড়লেও করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে বলে আমার মনে হয়না। আগে মানুষের বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বাইরে সবকিছু বন্ধ থাকলেও কেউ ঘর থেকে বের হবেনা। যা আগের লকডাউনের বেলায় ঘটেছে। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারসহ আমাদের সবার উচিত আগে সচেনতনতা সৃষ্টি করা। অন্তত পক্ষে মাস্কপরা শতভাগ নিশ্চিত করা। বাসায় প্রবেশের সাথে সাথে সাবান দিয়ে হাতমুখ ধৌতরা। তাহলে করোনার ৩য় ঢেউয়ের এই সংক্রমণ থেকে দেশ ও জাতিকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ.এইচ.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনার ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ৬০ ভাগ ভাড়া কার্যকরের প্রথম দিন বুধবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহানগর এলাকায় ৩ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করায় সতর্কতকা এবং জরিমানা করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের অগোচরে হয়তো কেউ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে থাকতে পারে। তবে এখন থেকে প্রতিদিনই মহানগর এলাকায় জেলা প্রশাসনের ৪টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও একাধিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।