২২ এপ্রিল ২০২১


এক পায়ের অতন্দ্র প্রহরী কাকতাড়ুয়া

শেয়ার করুন

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : ধানক্ষেতের পাহারাদার কাকতাড়ুয়া। কাক অথবা অন্যান্য পশুপাখিকে ভয় দেখিয়ে জমি রক্ষায় ব্যবহৃত মানুষের প্রতিকৃতিই কাকতাড়ুয়া। পাহাড়-টিলা, নদী-হাওর বেষ্টিত মৌলভীবাজার জেলা। বৈশাখ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাঠের পর মাঠ কাচাঁ-পাকা ধানে ভরে উঠেছে। ফলে এ ধানের মাঠে নানান জাতের পশুপাখির আনাগোনায় বেড়েছে। তাই কৃষকরা ধানের ক্ষতিকারক পশুপাখিকে ভয় দেখানোর জন্য ক্ষেতে স্থাপন করেছেন কাকতাড়ুয়া।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে দাঁড়িয়ে আছেন একজন লোক। হাত আছে, পা আছে, গায়ে আছে জামাও। কাছে গেলে টের পাওয়া যাবে আসল রহস্য।

মাটির হাড়ির পেছনে কাঁচা হাতে আঁকা চোখ, মুখ ও নাক। হাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছে মাথা হিসেবে। পুরো শরীরের আকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন সবল মানুষের মতো। নাম তার কাকতাড়ুয়া। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় একে বলা হয় কাট্টু।

আবহমান গ্রাম বাঙলার কৃষকরা ক্ষেতের ফসল পাখি, ইঁদুরসহ ফসলখেকো প্রাণীর উপদ্রব থেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছেন। গ্রামীণ জনপদে ফসলের ক্ষেতে অতি পরিচিত দৃশ্য এ কাকতাড়ুয়া। ফসলি মাঠ রক্ষা করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে একজন সার্বক্ষণিক পাহারাদার।

মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষেতের মাঠে এখনো কাকতাড়ুয়া দেখতে পাওয়া যায়। প্রযুক্তির যুগে চাষাবাদে যন্ত্রপাতি ব্যবহার হলেও ক্ষেতের ফসল রক্ষায় সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার পাল্টায়নি।

এ কাকতাড়ুয়া স্থান পেয়েছে গল্প, কবিতা, নাটক, সিনেমায়। বইয়ের প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছে চিত্রশিল্পীর তুলির আঁচড়ে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার হাওর পারের বড়বাড়ি গ্রামের সুমন দাসের বলেন, নানা ধরনের উপদ্রবের হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য এটি একটি পুরান পদ্ধতি। আধুনিক যুগেও কৃষিবিভাগ আমাদেরকে এ পদ্ধতি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার এলাকার কৃষক ইমন মিয়া বলেন, পাহারাদার হিসেবে একজন লোক রাখতে গেলে তাকে বেতন দেয়া লাগতো। সেক্ষেত্রে কাট্টু (কাকতাড়ুয়া) ব্যবহার করে বিনামূল্যে পাহারাদার পাওয়া যায়। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন প্রাণী ফসলের ক্ষতির জন্য আসে। কিন্তু কাট্টু দেখে মানুষ ভেবে এসব প্রাণী ক্ষেত থেকে দূরে থাকে।

রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাহাদুল ইসলাম বলেন, ‘কাকতাড়ুয়ার হাতের মধ্যে পাখি বসতে পারে। ফসলি মাঠে যখন ক্ষতিকর পোকা হানা দেয় তখন পাখিরা ওই পোকাগুলো খেয়ে ফেলে। ফলে কাকতাড়ুয়া কৃষকদের বেশ উপকারে আসে। তাছাড়া এটার জন্য কৃষকদের কোনো টাকা ব্যয় করতে হয় না’।

শেয়ার করুন