১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরীর জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা পিংকি ও সোহেল (ছদ্মনাম)। পিংকি নগরীর একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন। সোহেল একটি প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মরত। তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে তাঁদের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দেড় বছরের একটি সন্তান আছে।
পিংকির অভিযোগ, অফিস শেষ করে ঘরে এসেই সোহেল মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ছুটির দিনে একা বেরিয়ে যান মোটরসাইকেল নিয়ে। স্ত্রী সন্তানকে সময় না দেওয়াসহ নানা কারণে করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁদের দাম্পত্য কলহ লেগেই আছে। এ সব কারণে ঝগড়া করে কয়েক দফা বাবার বাড়ি চলে যান পিংকি। তবে শেষ পর্যন্ত সোহেলের আচরণ পরিবর্তন না হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন পিংকি।
নগরীর কানিশাইল এলাকার সুমি ও হাসান (ছদ্মনাম)। তাঁদের বিয়ে হয় প্রায় পাঁচ বছর আগে। এই দম্পতির সন্তান আছে দুটি। সুমির অভিযোগ, হাসান ঘরে এসেই মোবাইল ফোনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মোবাইল পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখেন। তবে সুমির ফেসবুকের পাসওয়ার্ড হাসান জানেন। সুমি কার সঙ্গে বার্তা চালাচালি করেন, সেগুলো চেক করেন হাসান। এসব নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে প্রায় পাঁচ মাস বাবার বাড়ি ছিলেন সুমি। পরে পারিবারিক সমঝোতায় আবার স্বামীর ঘরে আসেন। মাস খানেক পর আবারও হাসান আগের মতো আচরণ শুরু করেন। তাই সুমি বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন।
এই দম্পতিদের মতো সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রতি মাসে গড়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে ২০ থেকে ২৫টি। করপোরেশনের আইন শাখার তথ্যমতে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে ৫৪৯টি। এর মধ্যে সাতটি বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর হয়। তবে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৭২টি আবেদন জমা পড়ে। চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত পড়ে ৭২টি আবেদন। এ সব আবেদনের মধ্যে বেশির ভাগ কারণ ছিল স্বামী বা স্ত্রীর অতিমাত্রায় ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ।
আবেদনে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, মাদকাসক্তি, শারীরিক অক্ষমতা ও স্বামী-স্ত্রীর অবহেলার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে শুনানিতে এসে দেখা যায় অন্য কারণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর অতিরিক্ত আসক্তির কারণে দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দূরত্ব বাড়তে বাড়তে তাঁদের মধ্যে সন্দেহ দেখা দেয়। এমন সন্দেহ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন দম্পতিরা। এ ছাড়া বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় স্বামী অফিস থেকে ঘরে আসার পর স্ত্রী চা, পানি দেন না, স্বামী ঘরে এসেই মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, স্ত্রী সব সময় টিভি দেখেন, তাই বাচ্চাদের সময় দেন না, স্ত্রীকে মোবাইল ফোনের পাসওয়ার্ড দেন না স্বামী।
সিলেট সিটি করপোরেশনের আইন সহকারী শ্যামল রঞ্জন দেব বলেন, ‘কাজি অফিস থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনের অনুলিপি পাওয়ার পর আমরা দুই পক্ষকে তিনটি নোটিশ পাঠাই হাজির হওয়ার জন্য। এরপর শুনানির জন্য আরেকটি নোটিশ পাঠানো হয়। পরে মেয়র শুনানি করেন। সিলেট সিটি করপোরেশনের পারিবারিক ও সালিস বোর্ড/আদালতে প্রতি মাসে অন্তত তিনটি শুনানি হয়।
সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে এলে আমরা দুই পক্ষকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এ বিষয়ে পরিবারে মুরব্বিদের আরও সচেতন হওয়া উচিত। নতুন দম্পতিদের কিছুদিন নিজেদের মতো থাকতে দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধন আরও মজবুত করতে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত।’