You Are Here: Home»মহানগর»জাতীয় পতাকার সাথে ২২ বছর
জাতীয় পতাকার সাথে ২২ বছর
তুহিন আহমদ (অতিথি প্রতিবেদক) : বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা। নগরীর বন্দরবাজার পেপার পয়েন্টে তীব্র রোদে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ সারিবদ্ধভাবে সাজাচ্ছিলেন আমাদের জাতীয় পতাকা। দিনের শুরুতে পতাকা সাজিয়ে রেখে সারাদিন রাস্তার এক কোনে দাঁড়িয়ে পতাকা বিক্রি করেন তিনি। সেই বৃদ্ধ ব্যাক্তিটি শামস উদ্দিন। যার জীবনের দীর্ঘ ২২ বছর কেটেছে আমাদের জাতীয় পতাকা বিক্রিতে। এমনকি নিজের জীবিকাও নির্বাহ করেছেন সেই পতাকা বিক্রির আয়ে।
শামস উদ্দিন বলেন, ২২ বছর যাবৎ আমি এই জায়গায় পতাকা বিক্রি করে আসছি। পতাকা বিক্রির আয়েই চলে আমার সংসার। আর কোন কিছু কাজ করে মনে শান্তি পাইনা। পতাকা বিক্রি করে মনে একটা আলাদা ত্রিপ্তি পাই।
শামস উদ্দিনের বয়স ৫৫ বছর। কানের সমস্যা থাকার কিছুটা কম শুনেন। সিলেট সদর উপজেলার টুকের বাজারেই বাড়ি তার। সেখান থেকেই প্রতিদিন এই বন্দরবাজার পেপার পয়েন্টে আসেন। তারপর সেখানে পতাকা সাজিয়ে রাখেন। বেঁচাকেনা মোটামোটি ভালই হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রতিদিনই অনেকেই আসেন পতাকা কিনে নিয়ে যান। বিশেষ করে স্কুল কলেজ, অফিস আদালতের জন্য পতাকা কিনে নিয়ে যান। মাস শেষে ৫, ৭, ১০ হাজার টাকার মত আয় হয়। বিভিন্ন উৎসবে কিছুটা বাড়তি বিক্রি হয়। তখন সেই বাড়তি টাকা দিয়ে অনেকটা পোষিয়ে নিতে হয়।
দুই ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রীসহ ৬ জনের সংসার শামস উদ্দিনের। প্রত্যেক সন্তানই পড়াশুনা করছেন। পড়াশুনার খরচও ওই পতাকা বিক্রির টাকা দিয়ে চালাতে। কিছুটা হিমশিম খেলেও দিব্যি হাসিমুখে চালিয়ে যাচ্ছেন পতাকা বিক্রি। তবুও ছাড়ছেন না এই পতাকা বিক্রি।
তিনি বলেন, ছেলে মেয়েদের সকল পড়াশুনার খরচ এই পতাকা বিক্রির টাকা দিয়েই চালিয়ে নিতে হয়। কিছুটা হিমশিম খেলেও মানিয়ে নিচ্ছি। অন্য কিছু শান্তি পাইনা মনে। তাই পতাকা বিক্রি করছি গত ২২ বছর যাবৎ। প্রতিদিন সকালে টুকের বাজার থেকে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে আসি বন্দরবাজার পয়েন্টে। আবার রাতে ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে যাই বাড়িতে। এভাবেই দীর্ঘ ২২টি বছর কেটে গেছে পতাকা বিক্রির মাধ্যমে।
এই দীর্ঘ ২২ বছর অনেক টানা পোড়নের মধ্য দিয়ে গেলেও পতাকা বিক্রি ছাড়েন নি শামস উদ্দিন। এমনকি কোন চাওয়া পাওয়াও নেই তার। তার একটাই কথা আল্লাহ চালিয়ে নেবেন।
শামস উদ্দিন এর পাশেই আরেক পতাকা বিক্রেতা আবুল হোসেন। তিনিও পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি গত ১৫ বছর যাবৎ বিক্রি করে আসছেন আমাদের জাতীয় পতাকা। এমনকি সকালে এসেই বন্দরবাজার পয়েন্টের টাইম টাওয়ার এর রাস্তার মাঝখানের ত্রিকোন ডিভাইডারের দুই পাশে পতাকা সাজিয়ে রাখি। দেখতেও সুন্দর লাগে। যাদের প্রয়োজন হয় তারাও কিনে নিয়ে যান।
আবুল হোসেন আরও বলেন, প্রতিদিনই পতাকা বিক্রি হচ্ছে। সবসময়ই পতাকা চলে। ডিসেম্বর এলে বিজয় দিবসের জন্য একটু বেশীই চলে এই পতাকা। ওই সময়টাতেই একটু বাড়তি আয় হয়। পতাকা সব সময় চলে। কোন দিবস আসলে বেশী চলে।
জাতীয় পতাকার আকার ভেদে ১৫০ টাকা থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। তার মধ্যে মাঝারি আকারের পতাকা ১০০ টাকা তার থেকে কিছুটা আকারে ছোট পতাকা ৮০ টাকায় বিক্রি করেন বলেও জানান আবুল।
আজ ১লা ডিসেম্বর। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাসের শুরু। ১৯৭১ সালের এই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে নিয়ে এসেছিল এক মহান অর্জনের আনন্দ। একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় বাংলাদেশ। এদিন বিশ্বের বুকে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের নামে মানচিত্র রচনা করার ইতিহাস। পাকিস্তানিদের দ্বারা সুদীর্ঘ শোষণ, বঞ্চনা আর অত্যাচার-নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে। তাই ডিসেম্বর যেমনি বীরত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে কারান্তরিন করে হানাদার বাহিনী। শুরু হয় ইতিহাসের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। এরপরই শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা প্রতিরোধ। দেশকে স্বাধীন ও মুক্ত করার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে নানা বয়স, শ্রেণি ও পেশার নারী-পুরুষ। ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ নারীর সমভ্রমের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর আসে মুক্তির স্বাদ।
প্রতিবছর বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলে জাতি যেমন আনন্দে উদ্বেলিত হয়, তেমনি শোকে মুহ্যমান হয়ে স্মরণ করেন শহীদদের।