৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ডেস্ক রিপোর্ট : বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়া ফের পিছিয়েছে। এই মামলার পলতাক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের কারণে বিচার শুরুতে বিলম্ব হচ্ছে। গত রোববার অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলার শুনানির তারিখ ধার্য ছিলো। তবে পলাতক আসামি নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে দেন বিচারক আবদুল মোমেন।
এদিকে, এই মামলার এজাহারভূক্ত আসামী পুলিশের সাময়িক বহিস্কৃত এএসআই আশেক এলাহীর জামিন ফের না মঞ্জুর করেছেন আদালত।
কারাবন্দী থাকা এই এএসআই সোমবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে তার জামিন না মঞ্জুর করেন বিচারক মো. আব্দুর রহিম। এরআগে মহানগর হাকিম আদালতেও আশেক এলাহীর জামিন না মঞ্জুর হয়।
জানা যায়, কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমান এই হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে রায়হানকে নির্যাতনের আলামত নষ্ট করা এবং মামলার প্রধান আসামি বহিস্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলায় নোমান ছাড়া এজাহারভূক্ত বাকী সব আসামিই কারাগারে আছেন।
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আবুল মোমেন রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারায় নোমানের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন সিলেটের অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আমিরুল ইসলাম। তবে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় সোমবার বিচারকাজ শুরু হয়নি।
মামলার বাদিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, কোন আসামি পলাতক থাকলে তাকে বিচার কাজ শুরুর বিষয়টি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানাতে হয়। তবে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও নোমানের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর ব্যাপারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি। বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ না হওয়ায় বিচারক আবদুল মোমেন শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেন।
তিনি বলেন, আমরা আজ আদালতকে বলেছি, দ্রুততম সময়ে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য নির্দেশনা দেয়ার জন্য।
এম এ ফজল চৌধুরী আরও বলেন, আজ জজ আদালতে এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসামি বরখাস্ত হওয়া এএসআই আশেক এলাহীর জামিন আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বিচারক।
এর আগে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আশেক এলাহীর পক্ষে আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবী। সেদিনও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া প্রসঙ্গে এই আদালতের সরকারি কৌশলি জাহাঙ্গির আলম বলেন, পত্রিকায় আদালতের মাধ্যমেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এধরণের ক্ষেত্রে সাধারণত কয়েকটি মামলা একসাথে করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একারণে হয়তো দেরী হচ্ছে।
তবে বিচার কাজ শুরুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কলো না, তা আমার বোধগম্য নয়। আমি বিচারের অপেক্ষায় আর কতদিন থাকবো। আজ দেড় বছরেও বিচার শুরু হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ অক্টোবর মধ্যরাতে সিলেট মহানগর পুলিশের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদকে নির্যাতন করা হয়। পর দিন ১১ অক্টোবর সকালে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়।
এরপর পুলিশি হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে প্রধান অভিযুক্ত আকবর ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই (সাময়িক বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়।
অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ (সেকেন্ড-ইন-কমান্ড) পদে থাকা সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।