২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২


কোন পথে সিলেট জেলা বিএনপি?

শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছেনা সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের। আহবায়ক মনোনীত হওয়ার পর তার একের পর এক কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। শুধু জেলাতেই নয় তার নিজ উপজেলা বালাগঞ্জ এবং নিজ ইউনিয়ন বোয়ালজুড়েও দলীয় কমিটি গঠন নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। সবশেষ দলের তার নিজ উপজেলা বালাগঞ্জে দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে কৌশলে সিন্ডিকেট কমিটি করা নিয়ে চরম বিতর্কে পড়েছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ উপক্ষো করে গভীর রাতে ঘোষনা দেয়া উপজেলা বিএনপির কমিটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই নিজ স্বাক্ষরে আবার বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন। এনিয়ে তার উপর চরম বিরক্ত হয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলা বিএনপির নানা বিতর্কিত কর্মকান্ড দৃষ্টিগোচর হয়েছে বিএনপি হাই কমান্ডের। তাই জেলা বিএনপির সম্মেলনকে সামনে রেখে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বিএনপি কেন্দ্রীয় সংসদ। এখন আর জেলা শাখা থেকে কোন সিদ্ধান্তই মানতে নারাজ হাইকমান্ড। তারা পুরো জেলা কমিটির উপর থেকে এখন আস্তা হারিয়ে ফেলেছেন।

নাম না প্রকাশের স্বার্থে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির বেশ কয়েকজন সিনিয় নেতা বলেছেন- আহবায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছে জেলা বিএনপি। এসব বিতর্কিত কর্মকান্ড মনিটরিং করছে বিএনপির হাইকমান্ড। শুধু তাই নয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নিজস্ব লোক এবং স্থানীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবকিছু তদারকি করছেন। ডেইট টু ডেইট সব আপডেট নিচ্ছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী, আগামী কাউন্সিলে জেলা কমিটির পদলোভী গুটিকয়েকজন নেতার এজেন্টা বাস্তবায়নে কাজ করছেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির নীতি নির্ধারকরা। তাই বর্তমান কমিটির উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর প্রমাণ স্বরুপ কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকার পরও বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সম্মেলন ও কাউন্সিল ছাড়াই বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কমিটি অনুমোদন দেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। কমিটি অনুমোদনের ২৪ ঘন্টা পেরোনোর আগেই কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষনা করে বিএনপির হাই কমান্ড।

দলটির কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, এসি রুমের মধ্যে বসে কমিটি অনুমোদন নয়, নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করতে হবে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির একাধিক নেতা জানান, বিভিন্ন উপজেলা দলটির আহবায়ক কমিটি করার সময় জেলা কমিটির আহবায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জেলা কমিটির বেশীরভাগ সদস্যকে অন্ধকারে রেখে দলের ত্যাগী ও পরিক্ষিত নেতাদের বাদ নিয়ে নিজের অনুগতদের নিয়ে কমিটি ঘোষনা করেন। এর পর শুরু হয় প্রতিটি ইউনিয়নে সিন্ডিকেট কমিটি। আর এসব সিন্ডিকেট কমিটির মাধ্যমে কাউন্সিলের লেবাসে প্রতিটি উপজেলায় নিজস্ব জনবল দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হচ্ছে।

জেলা বিএনপির আহবায়ক সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েন নিজের উপজেলা বালাগঞ্জ ও নিজের ইউনিয়ন বোয়ালজুড় এর কমিটি গঠন নিয়ে। অনুগতদের পদায়ন করতে গিয়েই বাঁধা দেন তৃণমূলের নেতারা। সবশেষ দলের হাইকমান্ড ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান পর্যন্ত গড়ায়। এর পরই মুলত পুরো জেলার সিন্ডিকেট কমিটি গঠনের বিষয়টি নজরে আসে।

জানা যায়, বালাগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যে কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল এর বাহিরেও শক্ত সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাজী আব্দুন নুর এবং জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক উপদেষ্ঠা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে হেভিওয়েট প্রার্থী ছিলেন বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মনিম। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন দেওয়ানবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আলম নজম। জেলা বিএনপি রাতের আধারে ‘সমোঝতা’র নামে কমিটি করলেও এসব হেভিওয়েট প্রার্থীদেরকে ডাকা হয়নি।

এছাড়াও বোয়ালজুড় ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক কমিটি গঠনের সময় প্রথমে দলটির দীর্ঘ দিনের সভাপতি হাজী রফিক আহমদকে আহবায়ক করা হলেও পরে জেলা বিএনপির সভাপতি কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করেন। এসব বিষয় নিয়ে জেলা বিএনপির আহবায় কামরুল হুদা জায়গিরদার বেশ কিছু দিন নিজ ইউনিয়নে অঘোষিত ভাবে অবাঞ্চিত ছিলেন।

দলের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে সিলেট জেলা বিএনপির আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের মোবাইল ফোন বার বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, সিলেট জেলা বিএনপির ১৮টি ইউনিটের মধ্যে ১৪টি ইউনিট কমিটি ইতিমধ্যে গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি বাকী চারটি কমিটি এই মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। সবখ কমিটি কাউন্সিল করে ভোটের মাধ্যমেই হবে।

শেয়ার করুন