৯ মার্চ ২০২২
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : জনবল সংকটে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলার সব উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে একই অবস্থা বিরাজ করছে। সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার, নার্স ও অন্য কর্মচারীরা। এ ছাড়া অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাওরবাসী।
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলা। শুকনো মৌসুমে এ জেলার রূপ একরকম। আর বর্ষায় আরেক রূপ ধারণ করে। হাওরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা আজও শুকনো মৌসুমে পায়ে হাঁটা আর বর্ষায় একমাত্র বাহন নৌকা। এ অঞ্চলের মানুষ যেমন অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হন। বর্ষা বা শুকনো—এ দুই মৌসুমেই দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে উপজেলা সদর বা জেলা সদর হাসপাতালে আসতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁদের।
সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলা সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল আটতলা ভবন ও নতুন নতুন চিকিৎসা সরঞ্জাম পাচ্ছে। তবে হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ৫৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছেন মাত্র ১৫ জন। জেলা সদর হাসপাতালের মতোই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর চিত্রও প্রায় একই।
জেলার ১১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার ২৫৭ জনের মধ্যে আছেন মাত্র ৯৫ জন। ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ২৬০টি চালু থাকলেও রোগীদের জন্য নেই তেমন সুযোগ-সুবিধা। জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-কমিউনিটি ক্লিনিকেও স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না লোকবল সংকটের অভাবে।
এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাওর এলাকার মানুষের বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে হাসপাতালে পৌঁছাতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফলভড়ি গ্রামের জিয়াউল বলেন, ‘আমরা একেবারে হাওরের মধ্যেই বসবাস করি। বর্ষাকালে যদিও নৌকা দিয়ে অসুস্থ রোগী হাসপাতালে নিতে পারি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে যদি কোনো জটিল রোগী নিতে হয় হাসপাতালে, তাহলে মোটরসাইকেলে যেতে অনেক সময় ঝুঁকির মধ্যে পড়েন রোগীরা। বিশেষ করে চিকিৎসাসংকটে পড়ে বৃদ্ধ, শিশু ও নারীদের ভোগান্তির কোনো অন্ত থাকে না।’
তাঁদের অভিযোগ, দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত রোগী নিয়ে পৌঁছাতে পারলেও হাসপাতালে সময়মতো মতো পাওয়া যায় না চিকিৎসক। আবার যে কয়জন চিকিৎসক থাকেন, তাঁরা সময়মতো চিকিৎসাকেন্দ্রে না আসা এবং অনেক সময় রোগীর চাপে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন এখানকার বাসিন্দারা।
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা বড় কষ্টে আছি চিকিৎসাসেবা নিয়ে। বিশেষ করে কোনো গর্ভবতী মায়ের সমস্যা হলে হাসপাতাল ছাড়া উপায় থাকে না। তবে খুব কষ্ট করে হাসপাতাল নিতে পারলেও অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না।’
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগব্যবস্থার দিকে পিছিয়ে আছে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চল। এই সংকট উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন হাওরবাসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সুধীজন স্বপন কুমার বর্মন বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া দরকার। তাহলেই এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’
জেলার স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে লোকবল সংকটের কথা জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। জেলার সিভিল সার্জন আহম্মদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জে বর্তমানে চিকিৎসকের সংকট রয়েছে বিষয়টি আমরা অবগত। আগামী বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগে আমরা কিছুসংখ্যক চিকিৎসক পাব। তাহলে কিছুটা সংকট উত্তরণ করা সম্ভব হবে।’
জেলার ১১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার ২৫৭ জনের মধ্যে আছেন মাত্র ৯৫ জন। ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ২৬০টি চালু থাকলেও রোগীদের জন্য নেই তেমন সুযোগ-সুবিধা। জেলার সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-কমিউনিটি ক্লিনিকেও স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না জনবল সংকটের অভাবে।