৪ এপ্রিল ২০২২


সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপণ্যের বাজার!

শেয়ার করুন

ডেস্ক রিপোর্ট : টানাটানির সংসার বাড়তি খরচের চাপ। অনেকটাই বেসামাল মধ্যবিত্ত পরিবার। আয়তো বাড়েইনি, উল্টো দ্রব্যমূল্যের বাড়তি দামে বেহাল। বাড়ি ভাড়া, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের বাড়তি বিল, শিশুদের শিক্ষার খরচসহ নিত্যদিনের খরচের ঘানিটেনে দিশেহারা মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। রোজাকে ঘিরে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে আরেক দফা। যেন রোজার উত্তাপ লাগে নিত্যপণ্যে বাজারে। সব ধরণের নিত্যপণ্যের দামই এখন ঊর্ধ্বমুখী।

নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়- বাজারগুলোতে তেল, ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, চাউল, খেজুর ও অন্যান্য নিত্যপণ্য বিক্রি বেড়েছে। তবে সব পণ্যে রাখা হচ্ছে চড়া দাম। ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকার ১০ শতাংশ ভ্যাট কমালেও এখনো আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

দোকানগুলোতে বোতলজাত ভোজ্য তেল ৫ লিটার সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৭৯০ থেকে ৮০০ টাকা এবং এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। ছোলার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে এখন ৭৫ টাকা। বুটের ডাল ৫ টাকা বেড়ে কেজি এখন ৭৫ টাকা। কদিন আগেও ৯০ টাকা কেজি বিক্রি দেরে বিক্রি হওয়া মশুর ডাল এখন ১২০ টাকা কেজি। বেসন কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। বাজারে মোটা চাল এখন বাজারে ৪০ টাকা কেজি। মান অনুযায়ী চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা। মাসখানেক আগেও চালের কেজি সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা ছিলো।

জিরার দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকার মতো বেড়েছে। দারুচিনির দাম বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। আদা কেজি ৯০ থেকে এখন ১২০ টাকায় এবং শুকনা মরিচের কেজি ২৩০ থেকে ৩৫০ টাকায় পৌঁছেছে।

আর রোজার মাসে ইফতারির প্রধান অনুষঙ্গ খেজুরের দাম প্রকার ভেদে ১০০ থেকে ১৩৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। রসুন ১১৫-১৪০ এবং পেয়াজ ৩৪/৩৫ টাকা, আলু ১৮-২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

তবে, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬০০ টাকা দাম ধার্য করে দিলেও হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ এবং হাড়ছাড়া ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, গত সপ্তাহের ১৫০-১৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি শনিবার থেকে ২০০-২২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার ২৬৫ ও কক মুরগি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাল মোরগ পিস প্রতি ৫০০, মাঝারি ৪৫০ বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া কাঁচা বাজারে কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা থেকে এক লাফে ১৫০ টাকা, শসা ও গাজর ৪০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ঝিঙা ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৬০-৭০ টাকা, বেন্ডি ১০০ টাকা, বাধা কপি ৪০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বরবটি ৬০/৭০ টাকা, লেবু হালি ৫০ টাকা, ধনেপাতা কেজি ১২০ টাকা এবং কলার হালি ২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

নগরের রিকাবিবাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও হাশিম মিয়া বলেন, রমজানের শুরুতে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সংকট দেখিয়ে চড়া দাম রাখেন। তাই আমরা ১০/৫ টাকা বাড়তি দামেই বিক্রি করা দোষের কিছু দেখি না।

নগরের বন্দর বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন। কিন্তু আড়ৎদাররা দাম বেশি রাখে। এ কারণে বাড়তি দাম দিয়ে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

ব্রক্ষময়ী বাজারের আজাদ স্টোরের স্বত্বাধিকারী আল আমিন বলেন, পাইকারী বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়েছে। আর ভোজ্য তেলের দামতো নামেমাত্র কমেছে।

তার মতে, একবার যে জিনিসের দাম বেড়ে যায়, সহসাই তা কমানো হয় না। তার কথায় সিন্ডিকেটের কাছে বাজার জিম্মি।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহেল আহমদ বলেন, স্বাভাবিক সময়েই বাজার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। করোনার পর বর্তমানে আয় কমেছে। মাসে যা পাই, তা দিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সাধ আর সাধ্যের ভেতরে সব পণ্য কেনা সম্ভব হয় না।

আম্বরখানা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী ভোজ্য তেল সরবরাহ করছেন না। একারণে বাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া হঠাৎ করে পাইকারি বাজারে সব পণ্যেরই দাম বেড়েছে। তবে নিত্যপণ্যে সিন্ডিকেট রুখতে হার্ডলাইনে রয়েছে প্রশাসন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সিলেট মহানগর এলাকা বাজার মনিটরিংয়ে ৪টি টিম নামানো হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিক টিম বাজার মনিটরিং করবে। পুরো মাস জুড়ে মাঠে থাকবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট টিম। এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মাঠে কাজ করবো। খাদ্যের গুণগত মান, মূল্য, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে অভিযান চালানো হবে।

শেয়ার করুন