২৬ এপ্রিল ২০২২
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুসলিম মনিপুরি পাড়ার ঘরে ঘরে চলছে শাড়ি বোনার কাজ। বাড়ির নারীরা কাঠের তৈরি হস্তচালিত তাঁত মেশিন দিয়ে কাপড় তৈরির জন্য চরকিতে রঙিন সুতা রেখে কাজ করছেন।শাড়ি বিক্রি করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন এমনটাই আশা তাদের। তবে সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ শাড়ির দাম কমে যাওয়ায় ক্ষতির আশংকা করছেন তাঁতিরা।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪-১৫টি গ্রামে মনিপুরি সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। এখানে আছেন ১৫ হাজার মুসলিম মনিপুরি। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা ও ব্যাংক ঋণ সহজ করায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে এখন সবার ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁত মেশিন সচল রয়েছে। প্রতি পরিবারের নারীরা মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করেন।
তাঁত শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা ঋণের কিস্তি দিয়ে বাকি টাকায় সংসার চালান।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মনিপুরি অধ্যুষিত এলাকার কান্দিগাঁও, বন্দরগাঁও, তিলকপুর, ঘোড়ামারা, আলীনগর ও মাধবপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায় সব বাড়িতেই মনিপুরি নারীরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ঈদ সামনে রেখে তাঁতের শাড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত।
কথা হয় কলেজছাত্রী কান্দিগাঁও গ্রামের ইয়াছমিন বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক সময় আমাদের আয়ের বড় একটা অংশ আসতো তাঁত শিল্প থেকে। ৯০ দশকের শেষের দিকে এসে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের নিপুণ কারিগর মনিপুরি নারীরা অনেকটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ২০০০ সালের শুরুতে মনিপুরি তাঁতের শাড়িসহ অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুরে দাড়াঁয় এ শিল্প।
বন্দরগাঁও গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, এখন মনিপুরি পাড়ার প্রতিটি ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁতের মেশিন আছে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে ২/৩ দিনে একটি শাড়ি তৈরি করা যায়। ঈদ সামনে রেখে আমরা মুসলিম মনিপুরিরা ব্যস্ত সময় পার করছি। প্রতিটি শাড়ি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবো।
মাধবপুর গ্রামের লাইনুন নাহার বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে তাঁতের শাড়ি তৈরি করি। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে অনেক সময় সঠিক মূল্য পাই না। ঈদকে সামনে রেখে আমরা যখন বড় লাভের আশায় ছিলাম তখন মহাজনরা শাড়ির দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এতে আমরা লসে আছি।
তিলকপুর গ্রামের সাখাওয়াত মিয়া বলেন, সুতার দাম বৃদ্ধি পেলেও বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাড়ি সংগ্রহকারী মহাজনরা হঠাৎ শাড়ির দাম কমিয়েছেন। এতে বুননকারীরা লোকসানে পড়েছে। সিন্ডিকেট করে এমনটা করা হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে শাড়ির চালান সংগ্রহকারী মহাজন ফজলুল হক বলেন, শাড়ির দাম কমানোর বিষয়টি সঠিক নয়। বর্তমানে দেশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে মনিপুরি তাঁতের শাড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। আমি ঢাকা সিলেটের নামি-দামি মার্কেটে হাজার হাজার শাড়ি সরবরাহ করে থাকি। সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমার জানা নেই। এখানে ক্রেতা বিক্রেতা সচেতন হওয়ার দরকার আছে। মনিপুরি তাঁতের কাপড় কিনতে হলে মনিপুরিদের কাছ থেকেই কেনা উচিত।