২৩ জুন ২০২২


‘স্যার, একটা প্যাকেট ত্রাণ দেন, না হলে আমি মইরা যামু’

শেয়ার করুন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জে নৌযান দেখলেই ত্রাণের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। কেউ সাঁতার কেটে কেউবা গলাসমান পানিতে নেমেও নৌযানের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগই ফিরছেন খালি হাতে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ফিরছেন ত্রাণ না পাওয়ার বেদনা নিয়ে। সুনামগঞ্জ জেলার বেশিরভাগ এলাকায়ই এ অবস্থা দেখা গেছে।

‘স্যার, আমারে একটা প্যাকেট দিন, ঘরে গলা পানি। খাবার না পেলে আমি মইরা যামু’—ঠিক এভাবেই কোস্ট গার্ডের বোটের সামনে এক প্যাকেট ত্রাণ নিতে এমন আকুতি করতে দেখা যায় ১০ বছরের শিশু জীবন মিয়াকে।

শুধু জীবন নয়, শিশু থেকে শুরু করে নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধ সবাইকে দেখা গেছে ত্রাণের প্যাকেট পেতে আকুতি করতে। সুনামগঞ্জজুড়ে ত্রাণের জন্য এমন হাহাকার করতে দেখা গেছে।

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। ওইদিন রাতের মধ্যে ডুবে যায় জেলার ৮০ ভাগেরও বেশি এলাকা। সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের বেশিরভাগ চাল ছুঁয়েছে ঢলের পানি।

তালা দেওয়া অনেক দোতলায় গুরুত্বপূর্ণ অফিস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনের তালা ভেঙে জীবন বাঁচিয়েছেন লাখো মানুষ। ভয়াবহ বন্যার তাণ্ডবে ঘরে থাকা ধান-চাল, জমিতে থাকা সবজি, পুকুরের মাছ সবই ভেসে গেছে।

বর্তমানে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও ঘরে খাবার নেই, বাইরে কাজ নেই। বেশিরভাগ দোকানপাট এখনো খুলতে পারেননি দোকানিরা। এ অবস্থায় জেলার বেশিরভাগ এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা গেছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাই মহাবিপদে পড়েছেন। হাওরে নৌযান দেখলেই ত্রাণের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধরা।

সদর উপজেলার বাসিন্দা ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক প্যাকেট ত্রাণ পাওয়ার আশায় সকাল থেকে পানির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। নৌকা গেলেই ডাকছি। কিন্তু কেউ নৌকা ভেড়ায় না।’

সদর উপজেলার বাসিন্দা সুমন মিয়া অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি খাদ্য আসে ঠিকই কিন্তু আমরা পাই না। কয়েকজনকে দিয়ে চলে যায়। আমরা কিছুই পাই না।’

বুধবার সুনামগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে প্রায় ৩০০ প্যাকেট ত্রাণ নিয় কোস্ট গার্ডের একটি দল সুনামগঞ্জ সদর উপজলার গৌরারংয়ের দিকে রওনা দেয়। পথে ইব্রাহিমপুর, সদরগড় ও অক্ষয়নগরের হাজারও বানভাসি মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌযানের দিক ছুটে আসতে থাকেন। কোস্ট গার্ডের সদস্যরা ত্রাণবাহী নৌযান অক্ষয়নগর, পূর্ব-পশ্চিম সদরগড় ও ইব্রাহিমপুর ভেড়ানার চেষ্টা করলেও বানভাসি মানুষের ভিড় দেখে এগোতে পারেননি। পরে নৌযান থেকেই ত্রাণের বস্তা ছুড়ে দিয়েছেন কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।

কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা লে. সাব্বির আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জে দুর্গম এলাকায় আমরা ত্রাণ বিতরণ করছি। কিন্তু বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বেশি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় আমরা ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বৃহস্পতিবার সকালে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে এখনো বন্যার পানিতে প্লাবিত সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা। এমনকি জেলা সদরের সঙ্গে এখন পর্যন্ত যোগাযোগ সচল হয়নি ১২টি উপজেলার।

শেয়ার করুন