২৬ জুন ২০২২


ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জৈন্তাপুরের বন্যার্তরা

শেয়ার করুন

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের জৈন্তাপুরে ঘরে-বাইেের এখনোও শুধুই থই থই পানি। চারদিকে হাহাকার। বানের পানির তোড়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে। অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে বানভাসিদের। সব হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা। গ্রামে গ্রামে পাকা ঘর ছাড়া কাঁচা কোনো ঘরের অস্তিত্ব নেই। বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও যে ক্ষত সৃস্টি হয়েছে বানভাসিদের তা কোনও কিছু দিয়ে পোষাবার নেই। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী এসব মানুষ।

আধাপাকা ঘরগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও ঘরের বেড়া অথবা আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। বানের পানিতে আসবাবপত্র, হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, মাছ ধরার জাল ভেসে গেছে। তিল তিল করে যে সংসার সাজিয়েছিল তারা তা এখন শুধুই অতীত।

অপ্রতুল ত্রাণের পাশাপাশি এখন এ অঞ্চলের মানুষ ভুগছে বিশুদ্ধ পানি ও ঔষুধ সংকটে। বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে ঘরবাড়ী, গবাদি পশু, সকল খামারের মাছ। বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলছে ভাসমান লাশ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে মা-ছেলেসহ ৩ জনের সলিল সমাধি হয়েছে।

স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় সরকারি পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি, সংগঠন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে ত্রাণ সহায়তা করছে। পানি কমতে শুরু হওয়ায় স্বাভাবিক হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। বন্যাশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরলেও বন্যার পানিতে সহায়-সম্বল হারিয়ে তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কবে নাগাদ তাদের সুদিন আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

জানা গেছে, গত ২১ জুন সকালে আমীরাবাদ গ্রাম সংলগ্ন বাসেরখালে স্থানিয় জেলে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ দরবস্ত ইউনিয়নের মহালীখলা গ্রামের মৃত আজব আলীর স্ত্রী নজমুন নেছা (৫০) ও ছেলে আব্দুর রহমান (১২) লাশ দেখতে পায়। ২২ জুন সকালে স্থানীয় নৌকা শ্রমিকরা সারী নদীর কামরাঙ্গী স্কুল ঘাট এলাকায় চারিকাট ইউনিয়নের দক্ষিণ কামরাঙ্গীখেল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহিব মিয়ার ছেলে ৪ সন্তানের জনক বিলাল আহমদ (৪০) এর লাশ বস্ত্রহীন ভেসে থাকতে দেখে। মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেন জৈন্তাপুর মডের থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

ভয়াবহ বন্যায় করিচ নদীর তীরবর্তী ও মেদল হাওড় পাড়ের দুটি ইউনিয়ন ফতেপুর ও দরবস্ত এলাকা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে বেশি। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেদল হাওড়েরে পানি নিস্কাশনের একমাত্র পথ হচ্ছে করিচ নদী। করিচনদীর পানি বৃদ্ধরি কারণে হাওড়রে পানি বের হতে না পরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। এতে গর্দনা, কানজর, শেনগ্রাম, শুকইনপুর, হেমু ভাটপাড়া দত্তপাড়া, মাঝপাড়া জনপদ বন্যা আক্রান্ত হয়ছে বেশি।

পানিবন্দী লোকজন জানান, খাদ্য সংকট নয় এখন পুনর্বাসনের প্রয়োজন। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে আমাদের ঘর-বাড়ি, এখন কোথায় যাবো। তাই এখন প্রয়োজন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন। কিছু সংখ্যাক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে পাশাপাশি কিছুতে বন্যাশ্রয় কেন্দ্র থাকায় এখনো সবকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার শুকইন পুর গ্রামের বাসিন্দা খলিল আহমদ বলেন, তার বাড়ির ঘর, আসবাবপত্র, চাল, ধান, শিশুর পড়াশোনার জন্য বই, খাতা সবই শেষ। বন্যার পানিতে মা-বাবা, স্ত্রী সন্তানসহ ১১ সদস্য নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই দুঃশ্চিন্তা এখন তার।

উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেন, আসবাবপত্র, ধান, ব্যাংকে রাখা জমানো টাকার কাগজপত্র, সবই পানি নিয়ে গেছে। ছেলে-মেয়েসহ ৬ সদস্য নিয়ে চলছে দিন। সবচেয়ে বিপদে গরু, ছাগল খাবারের কিছুই নেই। এদিকে ১০বছর থেকে সংস্কার না হওয়া আমাদের রাস্তায় এখনো হাঁটু পানি। তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে।

জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় সব সড়কই ধেসে, ভেঙে ও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এখনো কিছু এলাকায় যাতায়াত ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। ফলে জনসাধারণ চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছেন দুর্গত পরিবার। তবে এসব পরিবারের মানুষের কপালে একটু খাবার জুটলেও নদীতে হারিয়ে যাওয়া ঘর বাড়ির মানুষ এখন নিঃস্ব।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মমি দাস জানান, হাসপাতালে ডাইরিয়া, জ্বর, নিউমোনিয়া, পানিবাহিত রোগ ও শিশু রোগী বেশী আসছেন। আমাদের মেডিকেল টিম ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন