আদিকাল থেকেই বাসন্তী তিথিতে জৈনপুরে শ্রী শ্রী মহালক্ষ্মী ভৈরবী দেবীর বাৎসরিক পূজার পারম্পরা
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৩

আদিকাল থেকেই বাসন্তী তিথিতে জৈনপুরে শ্রী শ্রী মহালক্ষ্মী ভৈরবী দেবীর বাৎসরিক পূজার পারম্পরা

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ০৮/০৪/২০২৫ ০৫:০৩:৩৯

আদিকাল থেকেই বাসন্তী তিথিতে জৈনপুরে শ্রী শ্রী মহালক্ষ্মী ভৈরবী দেবীর বাৎসরিক পূজার পারম্পরা


সনাতনীদের ধর্মীয় মতবাদে বিস্বাস অনুযায়ী পৃথিবীতে সতীর পবিত্র ৫১ টি পীঠস্থান সনাতনীদের কাছে তীর্থস্থানের মতই পবিত্র।
ভারতবর্ষের এসব পীঠস্থানগুলোর অন্যতম একটি হলো গ্রীবা মহাপীঠ। যা বাংলাদেশের আধ্যাত্বিক নগরী খ্যাত সিলেটের দক্ষিন সুরমার জৈনপুরে অবস্থিত।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরে স্থাপিত শ্রী শ্রী মহালক্ষ্মী ভৈরবী গ্রীবা মহাপীঠস্থানে প্রতিবছর বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। এ সময় স্থানীয় হিন্দু সহ বিভিন্ন এলাকার সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাসী ভক্তরা আসেন মায়ের আশির্বাদ নিতে। সনাতনীদের অনেকেই বলেন, এই মন্দির বা পীঠস্থান উপমহাদেশের প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিকে আবহমান কাল ধরে লালিত করে এবং বিশ্ব মৈত্রীর মাত্রাকে তরান্বিত করতে ভূমিকা রাখে।
দেশি বিদেশী সনাতনী ভক্তদের আগমন, ও বিভিন্ন লেখক গবেষকদের অনুসন্ধানী স্পৃহায় এই মহাপীঠ এক গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র স্থান। অচ্যুৎচরন চৌধুরী তথ্যনিধির "শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত" সহ, বিভিন্ন  প্রাচীন গুরুত্বপূর্ন্য গ্রন্থে পীঠস্থানের উল্লেখ্য রয়েছে।

প্রতিবছর এই পীঠস্থান বা মন্দিরে বহু যজ্ঞানুষ্ঠান করা হয়। সনাতনীদের এই পারম্পরা ধারাবাহিকতায় সদ্য ৪,৫ ও ৬ এপ্রিল বাৎসরিক পূজা অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সনাতনী  ভক্তদের উপবাস ব্রত, মানত-ক্রীয়াব্রত,  পুষ্পাঞ্জলি, ভোগ-আরতি, প্রসাদ গ্রহন, চণ্ডীপাঠ,কির্তন, সহ বৈচিত্র্যপূর্ন্য আয়োজন তিনদিন ব্যাপী মন্দির ছিলো ভক্তকূল পূর্ন্যতায় জমজমাট।

 ৪ এপ্রিল, শুক্রবার মহা-সপ্তমী হতে পূজা শুরু হয়। সকাল ৮ ঘঠিকা হইতে শুরু হয়ে উক্ত মন্দিরে অধিষ্ঠিত মায়ের বিহীত পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, চণ্ডীপাঠ, ভোগরাগ, কির্তন,ও প্রসাদ বিতরণের মতো নানাবিধ আয়োজনে দিনভর মন্দির ছিলো ভক্ত সমাগম পূর্ন্য। ওই দিন সিলেটের স্বনামধন্য ব্যান্ড গুরুচন্ডালী দুপুরে মাতৃ সঙ্গীত পরিবেশন করে।

৫ এপ্রিল, শনিবারে মহা অষ্টমী উপলক্ষে মায়ের বিহীত পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, চণ্ডীপাঠ, ভোগরাগ, ভোগারতি, আলোচনা সভা, প্রসাদ বিতরণের, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানাবিধ আয়োজনে দিনভর মন্দির ছিলো ভক্ত সমাগম পূর্ন্য। অষ্টমীর দিন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাতৃসঙ্গীত পরিবেশন করেন সিলেট নগরের সুপরিচিত সঙ্গীতশিল্পী  আংশুমান দত্ত অঞ্জন ও তার দল। এই দিন অষ্ঠমী তিথি উপলক্ষে  দুপুর ১২ ঘটিকার গ্রীবা মহাপীঠের গুরুত্ব, তাৎপর্য, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক বাস্তবতা ইত্যাদি বিভিন্নমূখী আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট নগরীর সাবেক মেয়র 'আরিফুল হক চৌধুরী'। আরিফুল হক বলেন, পূন্যভূমি সিলেট অধ্যাত্বিকতার জায়গায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমি। এখানে  হযরত শাহজালাল, শাহপরান মতো ঐতিহাসিক ধর্মগুরুদের তাৎপর্য রয়েছে। তেমনি হিন্দুদের বিস্বাস মতো শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু, শ্রীঅদৈত্য, অথবা এই মহালক্ষী ভৈরবী গ্রীবা মহাপীঠের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান রয়েছে। সিলেট বাংলাদেশের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম। সবাই সব ধর্মমতে সহনশীলতা ও সম্প্রীতি বাড়িয়ে আমরা সিলেটকে বাংলাদেশের মধ্যে মডেল বিভাগের তৈরির প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো। তিনি বিগত সময়ে, মেয়ের থাকাকালীন অবস্থায় বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে নিজ তৎপরতা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কথা উল্লেখ করেন। সামাজিক মূল্যবোধ ও নতুন প্রজন্মকে সম্প্রীতির শিক্ষায় উজ্জীবিত করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বকে স্বীকার করেন। বলেন, সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়ন প্রয়োজন। মন্দির ও মসজিদে লাইব্রেরী রাখার অনুরোধ জানাব। তিনি বলেন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে  মুক্তি পেতে হলে আমাদের নিজেদের ধর্মিয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুনদেরকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে সমাজকে জানার ক্ষেত্র তৈরি করে যেতে হবে। এসময় তিনি সদ্য প্রয়াত একুশে পদক প্রাপ্ত বাংলাদেশ বরন্যে লোকশিল্পী "সুষমা দাস" এর জীবনবোধ ও অবদান উল্লেখ্য করে দুঃখ প্রকাশ করেন।

এছাড়াও, আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, শ্রী সুদীপ রঞন সেন; ট্রাস্টি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যান ট্রাস্ট, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ। অনুষ্ঠান ও মন্দিরের উদযাপিত বার্ষিক পূজা সম্পর্কিত বিভিন্ন আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এদেশের সবাই মনে করেন হিন্দুরা শুধু নৌকায় ভোট দেয়। এ ধারনা থেকে সবাইকে বেড়িয়ে আসতে হবে।  হিন্দুরাও এমন মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে যেন, যে দল বা নেতা আমাদের উন্নয়নে কাজ করে তাদেরকে যেন আমরা ভোট দেই।

আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট রামকৃষ্ণ মিশনের অধক্ষ্য 'শ্রীমৎ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ। তাছাড়া আলোচক হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক 'ড.হিমাদ্রি শেখর রায়, হবিগঞ্জের সরকারি বৃন্দাবন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও গবেষক, লেখক, নৃপেন্দ্রলাল দাস; সিলেট শ্রী চৈতন্য গবেষণা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক, 'প্রকৌশলী মনোজ বিকাশ দেব রায়; সিলেট সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর দিলীপ কুমার দাস এডভোকেট প্রমুখ।  অষ্টমীর দিন বিকেল ৫ ঘটিকা হতে রাত ৮ টা পর্যন্ত হরিনাম সংকীর্তন পরিবেশন হয়।

৬ এপ্রিল, রবিবারে মহা নবমী উপলক্ষে মায়ের বিহীত পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, চণ্ডীপাঠ, ভোগরাগ, ভোগারতি, আলোচনা সভা, প্রসাদ বিতরণের, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানাবিধ আয়োজনে দিনভর মন্দির ছিলো ভক্তমূখর । নবমীর দিনের অনুষ্ঠান পর্বে দুপুর ২ ঘটিকায় পূর্ণাহুতি যজ্ঞ  অনুষ্ঠানের উল্লেখ ছিলো। অতপর, মাতৃবন্দনা,রামায়ন কির্তন,হরিনাম কির্তনের মত নানা আয়োজনে রাত ১২ টা অনুষ্ঠানমূখর ছিলো মন্দির প্রাঙ্গন। ৩ দিন ব্যাপি সার্বিক অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানের কর্মযজ্ঞের সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন জৈনপুর, দক্ষিণ সুরমা,  সিলেট এলাকাবাসী ও সতীতীর্থ সেবক সংঘ। অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা  সহ সার্বিক অনুষ্ঠান প্রকৃয়ার ব্যাবস্থাপনায় সভাপতি ছিলেন কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, শিবব্রত ভৌমিক চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক, জনার্দন চক্রবতী মিন্টু। আগত অতিথি ও ভক্তকূলের উদ্দেশ্য সভাপতি বলেন এই পীঠস্থানের প্রতি সরকার ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আরো গুরুত্বারোপের পক্ষে আমরা আশাবাদী। সাধারণ সম্পাদক জনার্দন চক্রবর্তী মিন্টু বলেন, দেশ বিদেশের ভক্তকুলের আগমন ও এই তীর্থস্থানে সনাতনী পর্যটকদের ও তৎ সংশ্লিষ্ট গবেষণার বিষয় গুরুত্বের বিবেচনা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে সবারই ভূমিকা পালন আবশ্যক। এই মন্দির সিলেট তথা উপমহাদেশের নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্যের ভাবাবেগকে  ধারন করে। তাই আমরা এই মন্দিরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে সহযোগিতা কামনা করি।

তিনদিন ব্যাপি ধর্মিয়, নান্দনিক সাংস্কৃতিক  ও সামাজিক ক্রীয়াকর্মাদির মধ্য দিয়ে 'শ্রী শ্রী মহালক্ষ্মী ভৈরবী গ্রীবা মহাপীঠস্থানে বাৎসরিক পূজা - ২০২৫' এর জাকজমক অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়।এতে ভক্তকুলের উচ্ছ্বাস ও সনাতনীদের ভক্তিযজ্ঞে এলাকা ছিলো লোকে লোকারণ্য।

আজকে সিলেট/ডি/এপি/বিজ্ঞপ্তি

সিলেটজুড়ে


মহানগর