রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নাত
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:০৬

মাগফিরাতের দশকের ষষ্ঠ দিন

রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নাত

মাওলানা শাহিদ আহমদ হাতিমী

প্রকাশিত: ২৭/০৩/২০২৪ ০৩:৩০:৫৩

রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নাত


নেকির দিনগুলি ফুরিয়ে যাচ্ছে। আজ ১৬তম রামজান। রোজা হলো গোনাহ মাফ করানো বা মাগফিরাত লাভের একটি সুনিশ্চিত ব্যবস্থা। অতি নির্ভরযোগ্য এক সুযোগ। কিন্তু যে বা যারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে, তার ধ্বংস অনিবার্য; তার বিপদ অবশ্যম্ভাবী।

ইমাম বোখারি রহ. রচিত আল মুফরাদ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, জিবরাইল আ. এসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি, যে রামজান মাস পাওয়ার পরও নিজের গোনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমিন’।

আরেক হাদিসে এসেছে- যে ব্যক্তি রামজান মাস পেল, কিন্তু এ মাসেও তাকে ক্ষমা করা হলো না; সে আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে চিরবঞ্চিত ও বিতাড়িত, (মুসতাদরাকে হাকিম)।

রোজাদারের মুখের গন্ধ দূর করতে মিসওয়াক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রোযা অবস্থায়ও মিসওয়াক করা সুন্নাত। এমনকি কাঁচা ডাল দ্বারাও মিসওয়াক করা যায়। এক সাহাবী বর্ণনা করেন- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি রোযার হালতে অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী ১/২৫৯; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০০)।

হাসান রাহ. কে রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই। মিসওয়াক পবিত্রতার মাধ্যম। অতএব দিনের শুরুতে এবং শেষেও মিসওয়াক করো।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৪/২০২)।

ইবরাহীম রাহ. বলেন, ‘রোযা অবস্থায় দিনের শুরু ও শেষে মিসওয়াক করতে কোনো অসুবিধা নেই।’ (প্রাগুক্ত ৪/২০৩)।

মেসওয়াক করে যে নামাজ আদায় করা হয়, সে নামাজে মেসওয়াকবিহীন নামাজের তুলনায় সত্তরগুন বেশী ফযীলত রয়েছে।(শুয়াবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস নং ২৫১৯)

এছাড়া আরো বহু উপকার রয়েছে।

ইহকালীন উপকার

  • মিসওয়াক করার মধ্যমে আল্লাহর রিজামন্দি হাসিল হয়।
  • দারিদ্র্যতা দূর হয়ে।
  • স্বচ্ছলতা আসে এবং উপার্জন বাড়ে।
  • পাকস্থলী ঠিক থাকে।
  • শরীর শক্তিশালী হয়। 
  • স্মরণশক্তি ও জ্ঞান বাড়ে।
  • অন্তর পবিত্র হয়।
  • সৌন্দর্য বাড়ে।
  • ফিরিশতা তার সঙ্গে মুসাফাহা করেন।

নামাজে বের হলে সম্মান করেন, নামাজ আদায় করে বের হলে আরশ বহনকারী ফিরিশতারা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

  • শয়তান অসন্তুষ্ট হয়।
  • ফুলসিরাত বিজলীর ন্যায় দ্রুত পার হবেন।
  • ডান হাতে আমলনামা পাবে।
  • ইবাদতে শক্তি পাবে।
  • মৃত্যুর সময় কালিমা নসিব হবে।
  • জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে।
  • জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা দেয়া হবে। 
  • পূত-পবিত্র হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।
  • দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়।
  • মুখের দুরগন্ধ দূর হয় ইত্যাদি।

মিসওয়াক করার পদ্ধতি

রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাইতুন ও খেজুর গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করেছেন। তাই এই দুটো হলে উত্তম।  এছাড়া তিক্তস্বাধ যুক্ত গাছের ডাল হলেও ভাল। মেসওয়াক কাচা ও নরম গাছের ডাল হওয়া উচিত, এতে মেসওয়াকে বাড়তি ফায়দা হাসিল হয়। মেসওয়াক নিজ হাতের আঙ্গুলের মত মোটা ও এক বিঘত পরিমাণ লম্বা হওয়া উচিত। এতে মেসওয়াক করতে যেমন সুবিধা হবে তেমনি বেশী ফায়দাও পাওয়া যাবে। অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে উযুতে হাত ধোয়ার পর কুলি করার পূর্বে মেসওয়াক করা উত্তম। তবে কোন কোন আলিম উযুর পূর্বে মেসওয়াক করার কথাও বলেছে। উযুর সময় ছাড়াও যে কোন সময় মেসওয়াক করা যাবে।

মানবেতিহাসের বিস্ময়কর এক যুদ্ধের নাম বদর। আগামীকাল ১৭ রামজান সেই ঐতিহাসিক দিন। ঐতিহাসিক বদর আমাদের ঈমানী চেতনায় শান দেওয়ার দিন। পরবর্তী পর্বে ঐতিহাসিক বদর নিয়ে আলোকপাত কর হবে। ১৬ তম রোজার মধ্য দিয়ে আজ আমরা সিয়াম সাধনায় ব্রত। রামজানে মাগফিরাতের দশকে ক্ষমা লাভের একটি দোয়া আমরা বেশি বেশি করতে পারি। তা হলো, হে আল্লাহ! এ দিনে সৎ কাজকে আমার কাছে প্রিয় করে দাও। আর অন্যায় ও নাফরমানিকে অপছন্দনীয় করো। তোমার অনুগ্রহের উসিলায় আমার জন্য তোমার ক্রোধ ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হারাম করে দাও। হে আবেদনকারীদের আবেদন শ্রবণকারী! হে রব, আমাদেরকে সুন্নাতী জীবনের গুরুত্ব অনুধাবন করার শক্তি দিন! (চলবে .....)

লেখক : জৈষ্ঠ সহ সম্পাদক, আজকের সিলেট ডটকম।

সিলেটজুড়ে


মহানগর