উপজেলা নির্বাচন বর্জনে অনড় বিএনপি
রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৩৩

উপজেলা নির্বাচন বর্জনে অনড় বিএনপি

আজকের সিলেট ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৯/০৩/২০২৪ ০২:১২:০১

উপজেলা নির্বাচন বর্জনে অনড় বিএনপি


আগামী ৪ মে থেকে দেশব্যাপী উপজেলা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকলেও বিএনপির হাইকমান্ড নির্বাচন বর্জনে অনড় রয়েছে। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ সতর্ক করে বলা হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অবশ্য দলটির তৃণমূল নেতারা এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যুক্তি হিসেবে বলছেন, এটি স্থানীয় নির্বাচন। যেহেতু এখানে দলীয় প্রতীক থাকছে না তাই সরকার জাতীয় নির্বাচনের মতো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।

এদিকে, বিএনপির অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে, দল যদি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় সেক্ষেত্রে হয়ত অনেকে এ নির্বাচনে অংশ নেবেস না, এমনটিই ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

মাঠে থাকা এই নেতারা মনে করছেন, তারা একরকম ‘জিম্মি’ অবস্থায় আছেন। তাদের ‘পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে’। অনেকটা ‘নিরুপায়’ হয়েই তারা নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপিতে দুই ধরনের মত রয়েছে। রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে একটি অংশ। আরেক পক্ষ মনে করে, এই নির্বাচনে গেলে তেমন কোনো অর্জন হবে না; বরং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হবে। এ অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিএনপি।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম- স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে দুই ধরনের মত আসে। তবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষের মতই বেশি। শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী হলে তাকে বারণ বা বহিষ্কারও করা হবে না এমন কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। স্থানীয় রাজনীতিতে যেহেতু সরকার পরিবর্তন হয় না, তাই তৃণমূলকে উজ্জীবিত রাখতে বিকল্প কৌশল ভেবে দেখা যেতে পারে। তবে নেতাদের কেউ কেউ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় নেতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিলে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে বৈধতা দেওয়া হয়। বিএনপি যেহেতু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করেনি, সে কারণে উপজেলা নির্বাচনও তাদের করা উচিত হবে না। আবার সুযোগ দিলে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্যক্তিও নির্বাচনে উৎসাহী হবেন, এতে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। এমন বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়াই উচিত।

বিএনপি নেতারা জানান, দেশে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। এ জন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। এ আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের অসংখ্য নেতা-কর্মী নিখোঁজ-খুন, পঙ্গু হয়েছেন। মিথ্যা মামলা-হামলা ও সাজা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির আহ্বানে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন দেশের মানুষ বর্জন করেছেন। এ অবস্থায় ক্ষমতাসীনদের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে গেলে জনমনে একটা ভুল বার্তা যাবে। মানুষ মনে করবে, বিএনপি তার অবস্থান থেকে সরে গিয়ে সরকারকে মেনে নিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না এটি পরিষ্কার ভাষায় বলা হয়েছে। কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন পর্যন্ত এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বিষয়ে অনড় আছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আমরা অংশ নেব কি না তা এখনও চূড়ান্ত করিনি। বিষয়টি নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকেরা বসবে। তখন কোনো সিদ্ধান্ত হলে আপনাদের জানাব।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে শতাধিক উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পরও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোয় প্রথমদিকে অংশ নিয়েছিল। ২০২১ সালের মার্চের পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি বিএনপি। বরং দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে মূলত সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরাই বেশি আগ্রহী। সারাদেশে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ৫০ জনের মতো বিএনপির সাবেক ও বর্তমান নেতা অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে। অন্তত ১০ নেতার প্রচার চালানোর তথ্য রয়েছে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতীক না থাকাটাই নির্বাচনে অংশ নিতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রলুব্ধ করেছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার জোরে স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ তাদের সামনে রয়েছে। আবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ ও উপজেলার নেতাদের মধ্যে একধরনের বিভক্তির তৈরি হয়েছে। সেটা কাজে লাগিয়ে নিজেদের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ করা গেলে অর্ধেক উপজেলায় উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করার মতো সক্ষমতা এখনো বিএনপির রয়েছে।

তারা বলছেন, বিএনপির মূল টার্গেট আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন, সুতরাং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তাতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ফলাফল কী হবে, সেটা পরের বিষয়। নির্বাচনে অংশ নিলে সারা দেশের নেতাকর্মীরা আত্মগোপন অবস্থা থেকে প্রকাশ্যে আসার সুযোগ পাবে। এতে দল চাঙ্গা হবে। আগামীতে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য এটি সহায়ক হবে।

২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। ওই সময় শতাধিক উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে অংশ নেন কুমিল্লার মনিরুল হক সাক্কু ও নারায়ণগঞ্জের তৈমূর আলম খন্দকার। এ ছাড়া উপজেলা, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনেও কিছু নেতা নির্বাচন করেন। তাদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ বন্দর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছেন নির্বাচনি প্রস্তুতি হিসেবে। তিনি জানান, গতবার দলের সিদ্ধান্ত মেনে অংশ নেননি। দুইবার উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন। এবারও তিনি অংশ নিতে চান। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠকও করেছেন।

দলটির একটি সূত্র জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা, বুড়িচং উপজেলার উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক জাভেদ কাউসার সবুজ, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার জাহিদুল হক, দেবিদ্বার উপজেলার বিএনপি সমর্থক মার্কিন প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া নির্বাচনে অংশ নেবেন এমন আলোচনা রয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তিনবারের চেয়ারম্যান (বর্তমান চেয়ারম্যান) ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ শাহজাহান, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য মহিবুল ইসলাম শাহিন নির্বাচন করার জন্য মাঠে রয়েছেন।

এ ছাড়া নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল ও জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান বিপুল নির্বাচন করতে পারেন এমন আলোচনা রয়েছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফখরুজ্জামান মতিন নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চেয়ারম্যান পদে গণসংযোগ করছেন বিএনপি নেতা মো. আনোয়ার হোসেন। সম্প্রতি সরাইল বাজার শাহী জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা করে দোয়া চেয়েছেন। নির্বাচিত হতে পারলে সততার সঙ্গে সরাইলবাসীর সেবা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দল ও মানুষের জন্য সততার সঙ্গে কাজ করেছি। তারপরও নানা প্রতিকূলতার বিরূদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করতে হয়েছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করতে হয়েছে। আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারলে আমি আধুনিক ও মডেল সরাইল উপহার দেব। অনিয়ম, দূর্নীতি, শোষণ, স্বেচ্ছাচারিতার বিরূদ্ধে লড়াই করাই হবে আমার মূল কাজ।

আজকের সিলেট/ডিটি/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর