দৃষ্টি দিতে হবে সংকটের গভীরে
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:০০

বিশেষ সম্পাদকীয় .............................

দৃষ্টি দিতে হবে সংকটের গভীরে

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত: ২৬/০৭/২০২৪ ০৯:২২:৫৪

দৃষ্টি দিতে হবে সংকটের গভীরে


গতকাল একটি জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকায় ‘কোটা আন্দোলনঃ স্ফুলিঙ্গ কেনো দাবানলে পরিণত হলো? শিরোনামে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি লিখেছেন চিত্তরঞ্জন সরকার। একটি অসাধারণ নিরপেক্ষ লেখা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রশ্ন হলো, সরকারী চাকুরীতে কোটা বাতিল বা কোটা সংস্কারের মতো আপাত নিরীহ একটি আন্দোলন কেনো এমন সরকার বিরোধী প্রবল আন্দোলনে রূপ নিলো? কেনো শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে উঠলো? কেনো সবখানে হিং¯্রতা ছড়িয়ে পড়লো? ক্ষমতাসীনদের অদূরদর্শিতা ও হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অথচ কোটা সংস্কার বা কোটা বাতিল আন্দোলন ছিলো নিতান্তই সরকারী চাকুরী প্রত্যাশী একটি ছোট গ্রুপের আন্দোলন। এটা কখনোই জাতীয় কোন ইস্যু বা গণদাবি হিসেবে গণ্য হওয়ার মতো কিছু নয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৭ কোটির বেশী মানুষ চাকরী এবং কর্মমুখী নানা ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে সরকারী চাকরীজীবির সংখ্যা মাত্র সাড়ে ১৫ লাখ, যা মোট কর্মক্ষম মানুষের এক শতাংশের মতো। এই অল্প কিছু শিক্ষার্থীর আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ সরকারের ভুল নীতি ও কৌশলের কারণে দানাবলে পরিণত হয়েছে, হয়ে গেছে জাতীয় ইস্যু।

তিনি আরো লিখেছেন, সরকার প্রথমেই যদি আন্দোলনকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতো, তাহলে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। সরকার বলতে পারতো, আমরা তোমাদের দাবির প্রতি একাত্ম। তোমাদের দাবি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে আমরা উচ্চ আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করবো। রায় প্রত্যাশা মতো না হলে নির্বাহী আদেশে কিংবা সংসদে আইন পাশ করে কোটা ব্যবস্থা যৌক্তিক পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করবো। প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণেও এমন কথা বলতে পারতেন।

তিনি বলতে পারতেন, তোমাদের হয়ে আমি আইনী লড়াই করবো। কিন্তু তেমন কোন কথা ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে শোনা যায়নি। বরং নানাভাবে আন্দোলনকারীদের ‘উদ্দেশ্য’ ও ‘রাজনৈতিক পরিচয়’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছেন। 

আন্দোলনকারীদের ‘স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার’ ‘শিবির’, বিএনপি’ ট্যাগ দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করা হয়েছে। চিত্তরঞ্জন আরো লিখেছেন, সরকার সবচেয়ে বড় ভুল করেছে আন্দোলন দমনে শক্তি প্রয়োগের কৌশল গ্রহণ করায়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-যুব সংগঠন কোন ধরনের রাখঢাক ছাড়াই আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। ছাত্রীদেরও নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। কোথাও কোথাও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়েছে। বর্তমানের এই শক্তিশালী প্রযুক্তির যুগে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের এই হিং¯্রতার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের এই দস্যুতার বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ হয়েছেন। এর ফল হিসেবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের হিংসার শিকার হয়েছেন। কিন্তু তারা তেমন কারও সহানুভূতি পাননি।

এই প্রতিবেদনের বিশ্লেষক একটি প্রশ্ন রেখেছেন এবং এর জবাব তিনি নিজেই দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর আন্দোলন কেনো জাতীয় ইস্যু হয়ে ওঠলো।

তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের ভুল সিদ্ধান্ত ও উস্কানীমূলক বক্তব্যকে মূলতঃ তিনি এজন্য দায়ী করেছেন। চিত্তরঞ্জন ঘটনার বাহ্যিক ও সাময়িক দিক তুলে ধরেছেন। গভীরে যাননি। সেই গভীরতায় এখনো যে কতো রহস্য এবং কতো ক্ষয়ক্ষতি ও শংকার বিষয় লুকিয়ে আছে, তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এই বিক্ষোভ আন্দোলনে এ পর্যন্ত দেশ ও জনগণের যে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে দেশব্যাপী রীতিমতো উদ্বেগ উৎকন্ঠার প্রকাশ ও হাহাকার চলছে। কিন্তু এই উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও হাহাকার বন্ধে স্থায়ী কোন সমাধানের কথা কি কেউ ভাবছেন?

এ ব্যাপারে যার দায় ও দায়িত্ব সবচেয়ে বেশী সেই সরকার তথা ক্ষমতাসীন মহল কী ভাবছেন, কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? এমন সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

সম্পাদকীয়

সিলেটজুড়ে


মহানগর