
তিন মাসের কঠোর পরিশ্রমে ১ ফুট থেকে দেড় ফুট লম্বা টমেটো গাছে সবেমাত্র ফুল আসতে শুরু করেছে। কৃষকের সবুজ স্বপ্ন হলদে রঙিন হতে চলছে। যেখানে রয়েছে কৃষকের মাথা থেকে পা অবদি ঘাম ঝরানো কায়িক শ্রমের পাশাপাশি বড় অংকের অর্থের যোগান। সারা বছরের পরিবারের আয়-ব্যয়ের ভরসায় হঠাৎ নেমে এসেছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। শীতকালীন সবজি টমেটোর বাগানে হঠাৎ রোগের আক্রমণে হতাশাগ্রস্ত কৃষক নুরুল আমিন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক নুরুল আমিন জানান, দুই বিঘা জমিতে আগাম শীতকালীন টমেটো চাষ করেছিলেন। গত ১৫দিন আগেও তার টমেটোর বাগান ভাল অবস্থায় ছিল। গত সপ্তাহে এসে হঠাৎ করে তার বাগানের ফুল আসা টমেটোর গাছ রোগের কবলে পড়ে। আকস্মিকভাবে এই রোগের কারণে তার বাগানের সিংহভাগ টমেটো গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। হতাশাগ্রস্ত কৃষক নুরুল আমিন চোখে এখন জোনাপোকা দেখছেন। ধার দেনা করে সাজানো বাগানের এই অবস্থায় দুই লক্ষাধিক টাকার মত লোকসানের মুখে পড়েছেন বলে তিনি জানান।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,সবুজ আবরনে হলুদ ফুল ফোটা টমেটো গাছগুলো ঢলে পড়ে পাতা কোকড়ানো অবস্থায় নিষ্প্রাণ দাঁড়িয়ে আছে। মাথায় হাত দিয়ে জমির আইলে বসে আছেন কৃষক নুরুল আমিন। বিভিন্ন জনের দেওয়া পরামর্শ মতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করেও বাগান রক্ষা করার চেষ্টা ব্যর্থ।
জানতে চাইলে হতাশাগ্রস্থ কৃষক নুরুল আমিন জানান, আমার সব স্বপ্ন শেষ, এখন আমি ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশায় ভুগছি। নিজের এক লক্ষ টাকা পুঁজির সাথে ঋণ আছি এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সার কীটনাশক ও বিভিন্ন ধরনের ঔষধ, প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিকের কাজের মুজুরিসহ দুই বিঘা জমিতে টমেটো বাগান করতে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা। শ্রাবণ মাস থেকে নিজে পরিশ্রম করে যাচ্ছি এই হিসাব আর নাই করলাম। । আশা ছিল এ বছর টমেটো বিক্রি করে সব ধার-দেনা পরিশোধ করবো। সব ফলবান টমেটো গাছ হঠাৎ করেই মারা গেছে। এখন ঋণের টাকা তো দূরের কথা, পরিবার-পরিজন নিয়ে চলাটাই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার শারীরিক ও মানসিক শক্তির সাথে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গেছে। এখন আমি সর্বশ্রান্ত।
তিনি বলেন,যার কাছে পরামর্শ নিতে যাই ঔষধ ধরাইয়া দেয়,রোগের কথা কিছু বলে না,ঔষধ ব্যবহারে ও কাজ হয় না।শুধু শুধু বড় অংকের টাকার অপচয় হয়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার রায়হান পারভেজ রনি জানান, এটা হচ্ছে ঢলে পড়া রোগ। মাটির কৃমি, ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক জনিত এই তিনটি কারণে হয়ে থাকে। সরেজমিন গিয়ে তথ্য নিয়ে রোগের কারণ উদঘাটন করতে হবে। তিনি বললেন এই রোগের ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। উপসহকারী কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ রাখলে সমস্যার সমাধান আসবে।
আজকের সিলেট/ডি/এসটি
