যে স্মৃতি চির অম্লান
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৫৮ AM

যে স্মৃতি চির অম্লান

----------------

প্রকাশিত: ১৬/০৫/২০২৫ ০৯:১২:০৬ AM

যে স্মৃতি চির অম্লান


মোঃ হাবিবুর রহমান সাদী : আজ বহুদিন পরে আব্বাকে নিয়ে লিখছি। ঠিক কতদিন পরে হবে তা সঠিক করে বলতে পারবো না। জীবন আর জীবিকার তাগিদে আমরা বিভিন্নভাবে ব্যস্থ হয়ে পড়ছি সময়ের সাথে। অথচ বিশ্বাস করুন একটি দিনের জন্যেও ভুলে থাকা হয়নি আমাদের প্রাণের এই মানুষকে। আমাদের কোন না কোন অনুষঙ্গে আব্বা আছেন চির অম্লান হয়ে। উনি জীবন্ত হয়ে থাকবেন আমাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে। আব্বাকে হারানোর আজ পুরো ১০ বছর।

অথচ, মনে হয় এইতো সেদিন আমরা আব্বার হাত ধরে ধরে মসজিদে গিয়েছি। ঈদের কেনাকাটা করছি আমরা তিন ভাই আব্বাকে সাথে করে। শহর ঘুরে বেড়িয়েছি আব্বার সাথে। আমাদেরকে রিকশায় নিয়ে ঘুরতেন আর প্রতিটি স্থানের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন। তিনি ছিলেন আমাদের এক মহান শিক্ষক।  আব্বাকে ঘিরেই ছিলো আমাদের সবকিছু। আব্বার সাথে টেইলার্সে শার্ট প্যান্ট বানাতে গেলে,যিনি কাপড়ের মাপ নিতেন আমরা তিন ভাইয়ের, উনাকে আব্বা  পেছন থেকে ইশারা দিয়ে বলতেন যাতে শার্ট প্যান্টগুলো একটু ঢিলে ঢালা করে তৈরি করে দেওয়া হয়। আবার আমরা যাতে না বুঝি সেদিকটাও খেয়াল রাখতেন। আমরা যাতে মনঃক্ষুন্ন না হই সেদিকটা খুব নিবিড়ভাবে দেখতেন। সময়ের এই প্রান্তে এসে বুঝি আমার আব্বাই ছিলেন সবচেয়ে আধুনিক। আমরা যেটাকে আধুনিক মনে করতাম সেটা ছিলো মরিচীকা। বলতেন সব রঙ্গে নিজেকে রাঙ্গাতে নেই।

হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা ছিলো আমাদের প্রতি। আমি মাঝেমধ্যে বলি,আমাকে যদি বলা হয় এমন কিছু ঋণের কথা বলো,যা তুমি এক জীবনে শোধ করতে পারবা না। আমি প্রথমেই বলবো বাজার ভর্তি ব্যাগ বহন করে আনতে গিয়ে, হাতের আঙ্গুলে রক্ত জমে যাওয়া আমার বাবার ভালোবাসার ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবোনা।

সহ্য আর ধৈর্য্যের এক পিরামিড ছিলেন আব্বা। নানামুখি সংকটের ভেতর দিয়ে গেলেও কাউকে কোনদিন সেটা বুঝতে দেন নি। আমাদেরকে তো কখনোই না। মানুষের সাথে সদাচরণ, ছোট থেকে বড়কে আগেভাগেই সালাম দেওয়া এগুলো ছিলো আব্বার অসম্ভব সুন্দর গুণাবলির মধ্যে অন্যতম। বড় সহজ-সরল আর প্রাণবন্ত একজন মানুষ ছিলেন উনি। দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে এসে,আর সমাজের বাস্তবতাকে সরাসরি সামনে নিয়ে যখন আব্বার সেই সুন্দর চেহারার কথা মনে করি, শ্রদ্ধা আর বিনয় বিগলিত স্বরে একটি কথাই বলি,আপনি সত্যি অসাধারণ একজন ভালো মানুষ ছিলেন আব্বা।

সামাজিক উন্নয়নে তিনি ছিলেন সোচ্চার একজন মানুষ। এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে যাঁরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন আব্বা ছিলেন তাঁদের অন্যতম। শিক্ষা-দীক্ষায় এলাকা এগিয়ে যাক সেটা চাইতেন মনে প্রাণে। ছিলেন চাতল শাহী জামে মসজিদের দীর্ঘদিনের সেক্রেটারি'র দায়িত্বে। মুরুব্বিদের মুখে এখনো শুনি আল্লাহর ঘর মসজিদের দায়িত্ব কত সতর্কতা আর নিষ্ঠার সহিত পালন করে গেছেন তিনি। আব্বার রেখে যাওয়া এই  কার্যাবালিগুলোই আমাদের পথ চলতে সাহস জোগায়,বড্ড অনুপ্রাণিত করে।

যেদিন আমি আম্মাকে নিয়ে পবিত্র ওমরাহ পালনে বিমানের সিড়িতে পাঁ রাখি,সেদিন আমি ভেতর থেকে একদম শক্তি হারিয়ে ফেলি। স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি আমি আমার ভেতর থেকেই। এই যাত্রায় যদি আব্বা থাকতেন তাহলে কত যে  খুশি হতেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। আল্লাহ, আমি ভেবে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ক্বাবার গিলাফ ধরে প্রাণভরে দোয়া করি আব্বার জন্য। যিঁনি আমাদেরকে এই পর্যন্ত আসতে জীবনে বহু কষ্ট স্বীকার করে গেছেন। যিঁনি চলে গেছেন নিরবে নিভৃতে।

বাবা নামক নেয়ামত হারিয়ে ফেলেছি আমরা আজ বহুদিন হয়ে গেলো। এই দশ বছর,বাবাহীন পুরো দশ বছর আমরা পথ চলছি, আমাদের জন্য একদম হৃদয় উজাড় করা আব্বার দোয়া মাথায় নিয়ে। আমাদের জন্য আব্বা দোয়া করতেন একদম আমাদের নাম ধরে ধরে।

যিঁনি আমাদেরকে অসম্ভব ভালোবাসতেন,আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন উনাকে আরো বেশি ভালোবাসেন,মায়া করে,দয়া করে জান্নাতুল ফেরদাউস এর বাসিন্দা করেন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক

সিলেটজুড়ে


মহানগর