
হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে বার্ষিক ওরস শরীফ উপলক্ষ্যে শতাব্দীপ্রাচীন লাকড়ি তোলা উৎসব অনুিষ্ঠত হয়েছে। সকাল থেকেই সিলেট শহর, শহরতলী, বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে হাজারো ভক্ত-আশেকান বাদ্য বাজিয়ে, স্লোগান তুলে দলে দলে হাজির হন হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে দরগাহ প্রাঙ্গণে।
শুক্রবার শত শত বছর ধরে চলে আসা এই উৎসব ঘিরে সিলেটে সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর, আধ্যাত্মিক পরিবেশ।
‘শাহজালাল বাবা কী জয়’, ‘৩৬০ আউলিয়াকি জয়’, ‘লালে লাল বাবা শাহজালাল’ -এই সব হৃদয়স্পর্শী স্লোগানে মুখরিত হয় সিলেট নগরী। ভক্তরা মিছিল আকারে লাক্কাতুরা চা-বাগানের দিকে রওনা হন এবং সেখানে থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে উৎসবের অংশ হিসেবে দরগাহে ফিরিয়ে আনেন।
মৌলভীবাজার থেকে আসা আব্দুল খালেক নামের এক ভক্ত বলেন, আমি গত দশ বছর ধরে এই উৎসবে অংশ নিচ্ছি। আমার বিশ্বাস, এই লাকড়ি তোলা শুধু ঐতিহ্য নয়, এটা আমাদের ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশের একটি উপায় শাহজালাল (রহ.)-এর প্রতি।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থেকে আসা খাদিজা বেগম বলেন, এই দিনটার জন্য আমরা সারাবছর অপেক্ষা করি। এখানে এসে আত্মা শান্তি পায়, এই জমায়েতে যেন আধ্যাত্মিক শক্তি ভর করে। একসঙ্গে সবাই লাকড়ি তুলি, আল্লাহর ওলির জন্য কিছু করতে পারার অনুভূতিটাই আলাদা।
শুধু সাধারণ ভক্তই নয়, বাউল সংগঠন, খানকা শরিফ ও বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মানুষজনও এই উৎসবে যোগ দেন। কেউ নাচ-গান করে, কেউ গজল পাঠ করে, আবার কেউ নীরবে ভক্তিভরে অংশ নেন এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।
ইতিহাসবিদদের মতে, জানা যায়, প্রায় ৭০০ বছর আগে ঠিক ২৬ শাওয়াল দিনেই হজরত শাহজালাল (রহ.) তাঁর ৩৬০ আউলিয়াসহ সিলেটে পদার্পণ করেন এবং হিন্দু শাসক গৌড় গোবিন্দকে পরাজিত করে ইসলামের বিজয় ঘটান। সেই দিনটির স্মরণেই এই লাকড়ি তোড়া উৎসব শুরু হয় এবং আজও তা জীবন্ত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
আজকের সিলেট/ডি/এসটি
