কিভাবে চলছে শতভাগ ফেল করা চার কলেজ?
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:০৮ AM

কিভাবে চলছে শতভাগ ফেল করা চার কলেজ?

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০/১০/২০২৫ ০৮:৪৫:৩১ AM

কিভাবে চলছে শতভাগ ফেল করা চার কলেজ?


এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সিলেট বোর্ডে বিগত ৫ বছরের মধ্যে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল না। এবছর রেকর্ড করেছে সিলেটের চারটি প্রতিষ্ঠান। যাদের একজন শিক্ষার্থীও এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তারচেয়েও অবাক হওয়ার মতো তথ্য-এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটিতে মাত্র একজন ও আরেকটিতে দুইজন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাকি দুটি কলেজের মধ্যে একটিতে ৭জন ও অন্যটিতে ২১জন।

এই পরিস্থিতিতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ও তদারকি নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠেছে। একই সঙ্গে এসব কলেজে পাঠদানের অনুমতি প্রদান নিয়েও প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা। যার কারণে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করার পর এই চারটি প্রতিষ্ঠানের তথ্য দিতে গড়িমসি করেন বোর্ড কর্মকর্তারা। 

অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৫ বছরে রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানা ও পৃষ্টপোষকতায় নামেমাত্র কলেজে পাঠদানের অনুমতি দিয়েছে সিলেট শিক্ষাবোর্ড। এসব কলেজের মানোন্নয়নেও কোনো তদারকি করা হয়নি কখনও। 

যার ফলশ্রুতিতে এবার চার কলেজের করুণ চিত্র ওঠে এসেছে। একজন শিক্ষার্থীও পাস না করা এই চারটি কলেজের মধ্যে রয়েছে-সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং হানিফা খাতুন মেমোরিয়াল কলেজ, ফেঞ্চুগঞ্জের জমিরুননেছা একাডেমি, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউতগাঁও হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সৈয়দ সইদ উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ।

সিলেট শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, এবছর জাফলং হানিফা খাতুন মেমোরিয়াল কলেজ থেকে মাত্র একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েও সে অকৃতকার্য হয়েছে। তাছাড়া জমিরুননেছা একাডেমি থেকে ২১ জন, রাউতগাঁও হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২ জন, সৈয়দ সইদ উদ্দিন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ৭ জন অংশ নিয়ে সবাই অনুত্তীর্ণ হয়েছে। 

এই চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাফলং হানিফা খাতুন মেমোরিয়াল কলেজ ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেনিতেও একজন শিক্ষার্থীও পায়নি। 

জাফলং হানিফা খাতুন মেমোরিয়াল কলেজের  প্রতিষ্ঠাতার নামে একটি মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে তিনি বলেন, কলেজটিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। তাই পরীক্ষার্থী নেই। কলেজের পাঠদানের অনুমতির বিষয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

ফেন্সুগঞ্জ জমিরুননেছা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিহার রঞ্জন বলেন, এ বছর প্রতিষ্ঠান থেকে ২১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিলেও কেউ পাস করেননি। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন— প্রতিষ্ঠার পর থেকেই খণ্ডকালীন শিক্ষক দ্বারা কলেজের পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কাউকে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া যায়নি। কলেজের ফান্ডেও পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তবে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোটামুটি ভালোভাবেই পাঠদান হয়েছে বলেন তিনি।

তিনি জানান, এরপর থেকেই কলেজে ধীরে ধীরে শিক্ষক সংখ্যা কমতে থাকে। একপর্যায়ে সকল শিক্ষকরা চাকরি ছেড়ে দিলে কলেজটি শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক দ্বারা কলেজের পাঠদান চলতে থাকে। 

সৈয়দ সঈদ উদ্দীন হাইস্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, এবছর আমার কলেজের অবস্থা শোচনীয়। মোট সাতজন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ জন ফ্যাক্টরিতে কাজ করে ৩ জন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এছাড়া বাকিরা কলেজে আসেই না। তাহলে পাশ করবে কিভাবে। ২০১২ থেকে কলেজ শাখা আমাদের চালু হলেও এবছর আমাদের ফলাফল খুবই খারাপ হয়েছে। আগামীকাল আমাদের উপজেলা পর্যায়ে বৈঠক আছে। সেখানে এই কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে আমরা কথা বলব।

এদিকে, এই সময়ে এসেও কলেজগুলোর শিক্ষার্থী সংখ্যা ও ফলাফল বিপর্যয়ের পরও তালিকাভুক্ত থাকা রহস্যজনক বলে প্রশ্ন তুলে সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এই সময়ে এসে এরকম কলেজ কীভাবে তালিকাভুক্ত থাকে, তা রহস্যজনক। কারণ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী না থাকলে কলেজের অনুমোদন থাকার কথা নয়। বিষয়টি ইতিমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরকে অবগত করা হয়েছে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।

আজকের সিলেট/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর