পুনর্গঠন হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫২

পুনর্গঠন হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি

আজকের সিলেট ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৪/০৩/২০২৪ ১০:৪৬:০৩

পুনর্গঠন হচ্ছে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের কমিটি


আন্দোলনে ব্যর্থতার দায়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে করা হয়েছে নতুন কমিটি। একইভাবে ব্যর্থতার দায়ে ভেঙে দেওয়া হতে পারে বিএনপি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এমনটিই জানিয়েছেন দলটির একাধিক সূত্র।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন ঠেকানোর মিশনে ব্যর্থ হওয়ার পর দলটি এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। দল গোছানোর দিকে মনোযোগ দিতে চাচ্ছে তারা। এ নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা সিরিজ বৈঠক করছেন। নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দলের স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটির শূন্যপদসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন করা হবে। তবে আপাতত কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে না।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে রাজধানী ঢাকায় বিএনপির রাজনীতি ছিল অনেকটা ঢিলেঢালা। ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধে মাঠে দেখা যায়নি দুই মহানগর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের। অনেক নেতৃবৃন্দ কারাগারে থাকলেও যেসব নেতা বাইরে ছিলেন, তারাও মাঠে নামেনি। ছিলেন আত্মগোপনে। তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে করেনি যোগাযোগ। আন্দোলনের সমন্বয়ও করেনি।

নির্বাচনের পরই আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে নামে বিএনপির হাইকমান্ড। দলটির মূল্যায়নে উঠে আসে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো রাজপথে কার্যকর ও প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি। এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে আগামীর আন্দোলন সামনে রেখে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে নিষ্ক্রিয় সংগঠনগুলো পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন হাইকমান্ড।

বিএনপির অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ হলে মূল দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হতে পারে। নতুন লোক দিয়ে দলের স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য। তবে অঙ্গসংগঠন পুনর্গঠনের মধ্যেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুটি শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় দলের কয়েকটি বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আনা হতে পারে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দল পুনর্গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নেতৃত্বের সামনের সারিতে নিয়ে আনা হবে। বিশেষ করে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে সংগঠনের দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত করতে ছক তৈরি করছে দলটি। এ ক্ষেত্রে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মূল নেতৃত্বে ছাত্রদলের সাবেক শীর্ষ নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে, মূল নেতৃত্বে বয়সের বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা অপেক্ষাকৃত তরুণ তাদের মূল নেতৃত্বে না এনে সুপার ফাইভে অধিষ্ঠিত করে পরের কমিটির তৈরি করতে নেওয়া হচ্ছে প্রস্তুতি।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সম্ভাব্য নতুন কমিটিতে তরুণ নেতৃত্বে দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবলেও এখানে সভাপতি হিসেবে একজন সিনিয়র নেতাকে প্রয়োজন বলে মনে করেন মহানগর বিএনপি নেতারা।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য বলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রায় সকল থানায় রাজপথে সক্রিয় ছিল। তারপরও দল যদি মনে করে মহানগর পুনর্গঠন করবে তাহলে করতে পারে। সেক্ষেত্রে মহানগর বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া দরকার। তা না হলে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করা কঠিন হয়ে যাবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক কারাগারে যাওয়ার পর এমন একজনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছে, যার সঙ্গে কোনো থানা বা ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। এরমধ্যে সদস্য সচিব আমিনুল হক আটক হবার পর অনেকটাই আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিলাম। তবে, কারাঅন্তরীণ থাকার পরও বিভিন্ন মাধ্যমে আমিনুল হক আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

যদিও বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বলছেন, আমাদের দায়িত্বশীল নেতাদের মামলার কারণে হোক আর অদৃশ্য কারণে হোক রাজপথে দেখা না গেলেও কমিটির অন্যান্য নেতাকর্মী রাজপথে সক্রিয় ছিল। এ বিষয়ে যুবদলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমাদের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু অসহযোগ আন্দোলনের সময় মামলার কারণে সবসময় রাজপথে প্রকাশ্যে না থাকতে পারলেও আমরা টেলিফোনে তার গাইডলাইন নিতাম। উনি আমাদের মনোবল যুগিয়েছেন।

সূত্র জানায়, যুবদলের শীর্ষ পদগুলোতে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কে এম মোরতাজুল করিম বাদরু, আকরামুল হাসান মিন্টু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুনুর রশিদ মামুন, ফজলুর রহমান খোকন, হাসান মামুন, যুবদলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সহ-সভাপতি সম্পাদক জাকির হোসেন সিদ্দিকী, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদমর্যাদার সাঈদ ইকবাল টিটু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহীন এবং মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন।

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ পদগুলোর আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এক নম্বর সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার, বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

অন্যদিকে কৃষক দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বেশ কয়েকদিন রাজপথে দেখা গেলেও আন্দোলনের মাঠে কমিটির অন্য নেতাদের তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি। কৃষক দলের মূল নেতৃত্বে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, মামুনুর রশীদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, কৃষিবিদ শাহাদাৎ হোসেন বিপ্লব, মেহেদী হাসান পলাশ, আলহাজ ভিপি ইব্রাহীম, দিপু হায়দার প্রমুখ।

রাজপথে মহিলা দলের কার্যক্রম ছিল না দৃশ্যমান। মহিলার সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মহিলা দলের ওপেন সিক্রেট। আফরোজা আব্বাস কেন্দ্রীয় সভানেত্রী হলেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রম ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মতিঝিল, শাহজাহানপুর, সবুজবাগ ও খিলগাঁওয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, অভিযোগ দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের। নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদগুলোর আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক নিলোফার চৌধুরী মনি, সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু এবং মহিলা দলের বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জারিন খান, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেন লিপি।

দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় শ্রমিক দলে নেই কোনো সমন্বয়। জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের শীর্ষ পদগুলো ঘিরে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সভাপতি কাজী মো. আমির খসরু, কেন্দ্রীয় সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন সরকার।

সক্রিয় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয় জাসাস। জাসাস শীর্ষ পদগুলোর আলোচনায় সঙ্গীত এবং অভিনয় জগতের কয়েকটি নাম যার মধ্যে রয়েছেন- কনক চাঁপা, ইথুন বাবু, মনির খান, আসিফ আলতাফ, আসিফ আকবর, শিবা শানু, জামাল উদ্দিন নাসির এবং নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বর্তমান সদস্য সচিব আমিনুল হক, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, বিএনপি নেতা কফিল উদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, লিটন মাহমুদ, আনম সাইফুল ইসলাম।

আন্দোলনে তাঁতীদলেরও ছিল না চোখে পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম। তবে, পেশাজীবী সংগঠনগুলো ছিল সক্রিয়। এরা প্রেসক্লাবের সামনে ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছিল।

অঙ্গ সংগঠনের পুনর্গঠন প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দল যখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তখন আপনারা জানতে পারবেন। পরিবর্তন হলো রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নতুন কমিটি হওয়া স্বাভাবিক বিষয়। পুনর্গঠন সবসময়ই হয়ে থাকে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। দল যখন মনে করবে কমিটি পরিবর্তন প্রয়োজন তখন করতেই পারে।

আজকের সিলেট/ডিটি/ডি/এসটি

সিলেটজুড়ে


মহানগর